Highlightসম্পাদকীয়

তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছিলাম এই “সংবিধান দিবস”

শরদিন্দু বিশ্বাস

শরদিন্দু বিশ্বাস : ভারতের সংবিধান সারা বিশ্বে গণতন্ত্রের সর্ববৃহৎ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। গণতন্ত্রপ্রেমী সব দেশই এই সংবিধানকে মহান সংবিধান হিসেবে অভিবাদন করে। এই সংবিধানের জন্যই বিগত ৭৫ বছর ধরে দেশের ২৯টি রাজ্য, ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ২২টি মূখ্যভাষা, ১৭০০র বেশী মাতৃভাষা, ৭টি মুখ্য ধর্ম এবং ৬৭৪৮টির বেশী জাতীসমূহের বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও এদেশের মানুষ সংবদ্ধ নাগরিক জীবন উপভোগ করছে। বিবিধের মাঝে মিলনের এমন সুনিবিড় বন্ধন সারা বিশ্বে বিরল।
ভারতের সংবিধানের ভীত এমন ভাবে গড়া হয়েছে যে, এদেশের প্রত্যেক নাগরিক যেন আর্থিক, সামাজিক, ধার্মিক ও সাংস্কৃতিক মার্গ প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়। সমতা, স্বতন্ত্রতা, ন্যায় ও মিত্রতাই এই সংবিধানের মূল উদ্দেশ্য। এই সংবিধান ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, ভাষা এবং আঞ্চলিক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে এসে সদ্ভাবনার সাথে জীবন অতিবাহিত করার মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে।
আপনারা হয়ত অনেকে জানেন যে, ভারতের সংবিধানের প্রধান রূপকার বাবাসাহেব ডঃ ভীমরাও রামজী আম্বেদকর ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের হাতে এই সংবিধান তুলে দেন। ভারতের সংবিধান সভায় তা গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারী এই সংবিধান কার্যকরী করা হয়।
সংবিধান দিবস পালনের নেপথ্য ইতিহাসঃ
ঐতিহাসিক কারণেই দীর্ঘদিন ধরে আম্বেদকরবাদীরা ২৬শে নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করার দাবী জানিয়ে আসছে। এই দাবীর পক্ষে সব থেকে সোচ্চার ছিলেন আনন্দ তেলতুম্বড়ে।
২০১৩ সালে জয় ভীম ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক এবং পিপলস মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া যৌথ ভাবে কোলকাতার ধর্মাংকুর সভাগৃহে “সংবিধান দিবস পালন” শীর্ষক একটি সভার আয়োজন করে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ আনন্দ তেলতুম্বলে, কর্নেল সিদ্ধার্থ বার্ভে, পলাশ বিশ্বাস, হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম সহ বহু সমাজকর্মী এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সংবিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, আগামী ২৬শে নভেম্বর, ২০১৪ কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের নিকট রেড রোডে অবস্থিত বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে ২৬শে নভেম্বরকে “সংবিধান দিবস” হিসেবে পালন করা হবে। এই দাবীর সপক্ষে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যথোচিত মর্যাদায় পালিত হবে সংবিধান দিবস। সংবিধান দিবসের মূল শ্লোগান হবে “সংবিধান বাঁচাও, দেশ বাঁচাও”।
২০১৪ সাল। সকাল ৯টা। কোলকাতার মেট্রো চ্যানেল থেকে শুরু হয় আমাদের দীপ্ত মিছিল। ঘোড়ার গাড়ীতে সুন্দর করে সাজানো হয় বাবাসাহেবের এক বিশাল ছবি। রাখা হয় ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনার ছবি।
মিছিলে যোগদান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ। যোগদান করেন ব্যাঙ্ক কর্মচারী, রেলকর্মচারী, এলআইসি এবং কোলকাতার সাফাই কর্মচারী সমিতির অসংখ্য আম্বেদকর অনুরাগী। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন, কর্নেল সিদ্ধার্থ বার্ভে, প্রাক্তন আইপিএস নজরুল ইসলাম, দলিত চেম্বার্স অফ কমার্স এর সুরেশ রাম, হেমেন্দু বিকাশ চৌধুরী, সাংবাদিক পলাশ বিশ্বাস, সাহিত্যিক কপিল কৃষ্ণ ঠাকুর, পীযূষ গায়েন, শঙ্কর প্রসাদ রায়, অরুণ বরুয়া, তপন মণ্ডল, আস্তিসু রুপোয়া, চাভাস তুজরা এবং আরো অনেকে।
কোলকাতায় আয়োজিত এই মিছিলের সম্পূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল বার্ভে এবং শরদিন্দু বিশ্বাস। গোটা অনুষ্ঠানের ফটো এবং ভিডিও সংগ্রহ করে রাখেন সুকেশ মালি এবং পরিমল মল্লিক।
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ২৬শে নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেবার জন্য আয়োজন করা হয় বিশাল মিছিল। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাডু, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড় প্রভৃতি রাজ্যে পালিত হয় সংবিধান দিবস। খুশির কথা ২০১৫ সালের ১৯শে নভেম্বর মিনিস্ট্রি অফ সোশ্যাল জাস্টিস এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট ২৬শে নভেম্বরকেই সংবিধান দিবস হিসেবে মান্যতা দেয় এবং সারা দেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এই দিনটি পালিত হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেয়। আম্বেদকরবাদীদের দীর্ঘদিনের দাবী পূর্ণ হয়। জয় হয় গণতন্ত্রের, জয় হয় ভারতীয় সংবিধানের।
আগামীকাল ২৬শে নভেম্বর। কোলকাতার রেডরোডে অবস্থিত বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশ থেকে সুচনা হয়েছিল এই “সংবিধান দিবস” পালনের ইতিহাস।
আসুন আগামীকাল ২৬শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১টায় ফোর্ট উইলিয়ামের রেড রোডে অবস্থিত বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করে “সংবিধান দিবস” পালন করি। ন্যায়, সাম্য, স্বাধীনতা এবং ভ্রাতৃত্ব রক্ষার শপথ করি। আওয়াজ তুলি সংবিধান বাঁচাও দেশ বাঁচাও, দেশব্যাপী জাতিভিত্তিক জনগণনা করতে হাবে এবং জল-জঙ্গল-জমি রক্ষার্থে উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

Related Articles

Back to top button
error: