HighlightNewsসম্পাদকীয়

বিচার ব্যবস্থা যখন প্রশ্নবিদ্ধ

মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন: প্রথিতযশা আইনবিদ কপিল শিব্বাল ভারতের বর্তমান বিচার ব্যবস্থার উপরে এক গুচ্ছ প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, “আপনি যদি মনে করেন ভারতের বিচার ব্যবস্থায় সঠিক বিচার পাবেন তাহলে আপনি ভুল করবেন।” ৮ আগস্ট কনস্টিটিউশন ক্লাবে একটি নাগরিক ট্রাইব্যুনালে “বিচার পাওয়ার বিষয়ে নাগরিকদের অধিকার” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করেন যখন কোন বিচারক নিয়োগ করা হয় একটি বিশেষ আপস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তখন বিচার ব্যবস্থার কাছে আপনি সুবিচার কিভাবে আশা করতে পারেন। তার মতে প্রধান বিচারপতি ঠিক করেন কোন কেস কোথায় বিচার হবে। কোর্ট সাধারণত স্বাধীনভাবে এগুলি নির্ধারণ করতে পারেনা।
শুধু কপিল শিববাল নয় ইতিপূর্বে বিচারপতি চ্যালামেস্বর, রঞ্জন গগৈ, এম ডি লকুর এবং কোরিয়ান জোসেফ একটি প্রেস কনফারেন্স করে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার বর্তমান দুর্দশার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন। তারা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার উপর প্রভাবশালীদের আধিপত্য যদি শেষ করা না হয় তাহলে এদেশের ডেমোক্রেসি অস্তিত্বের সংকটে পড়বে।
প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত ডুবে, প্রশান্ত ভূষণ প্রমূখ ব্যক্তিদেরও একই অভিমত।
সিব্বাল প্রশ্ন করেন সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানের কি অপরাধ তাকে ২২ মাস ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে কেন? কি এমন অপরাধ সে করেছিল যার জন্য তাকে জামিন দেয়া হয়নি? তার তো শুধু এতটুকুই অপরাধ যে সে একটি গাড়িতে করে হ্যাতরাস গণধর্ষণ কাণ্ডের রিপোর্ট করতে যাচ্ছিল। এইরকম এক সাংবাদিককে আটক করার পর তার নামে ১০০ কেস দেওয়া হয়েছে। ১০০ কেস মীমাংসা করে কবে সে জামিন পাবে?
তিনি মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সীতালাবাদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন তিস্তা সীতলাবাদ কংগ্রেস এমপি এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরিকে আইনি পরামর্শ দিতেন এবং একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে ভারতের নির্যাতিত একজন মানুষের সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এটাই তার অপরাধ। এই জন্যই তাকে বন্দী করা হয় এবং কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ভারতের এক ঝাঁক প্রবীণ আইন বিশারদদের এই উদ্বেগ সত্যিই চিন্তার বিষয়। আমাদের দেশ কোন হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো দেশ নয়। এদেশের একটি সংবিধান আছে। এবং স্থানীয় পর্যায়ে থেকে শুরু করেই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি দায়িত্বশীলকে সংবিধান মেনে চলার শপথ গ্রহণ করে দায়িত্বভার তুলে নিতে হয়। এ দেশের সংবিধানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভাষা নির্বিশেষে সকলের প্রতি সমান সুবিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আইনের চোখে সকলে সমান। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে দীর্ঘ ৭৫ বছর বিচার ব্যবস্থা এত নাজুক অবস্থায় পরিণত হয়নি। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে সুবিচার পাওয়া সোনার পাথর বাটিতে পরিণত হবে। তাই বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে জনগণের সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য জনগণকেই ময়দানে অবতীর্ণ হতে হবে। সুবিচার দেওয়া রাষ্ট্রের একান্ত মৌলিক দায়িত্ব। যে কোন সংকীর্ণতার বশবর্তী হয়ে যদি সেই সুবিচার প্রদান করা থেকে কোন সরকার ব্যর্থ হয় তাহলে সেই সরকার বা সেই রাষ্ট্রের পরিচালকদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। আমাদের পূর্বপুরুষগণ এ দেশকে যে গণতান্ত্রিক ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুবিচারের পরিবেশকে রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক কর্তব্য সুতরাং এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন হতে হবে।

Related Articles

Back to top button
error: