রাজ্য

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মুসলিমরা কোন দলকে ভোট দিতে পারে?

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, কলকাতা: ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের জন্য বহুমুখী রাজনৈতিক ভাবনা ভাবছে মুসলিম নেতারা। তবে প্রায় সবাই বলছে, যেকোন ভাবে সাম্প্রদায়িক ও হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে।
এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু সমাজের একটা অংশ মনে করছে,দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের সময় মুসলিম উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও বিজেপিকে ঠেকাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিকল্প নেই। আবার একটা অংশ বিকল্প শক্তি হিসেবে বাম-কংগ্রেসের উপর ভরসা রাখছে। অপরদিকে হাতেগোনা কিছু আরবীয় নামের মুসলিম বিজেপির উপর আস্থা রাখছে!
কিন্তু বিজেপিকে ঠেকাতে একটা অংশ আবার আদিবাসী-দলিত- মুসলিম জোট করতে চাইছেন। মুসলিম রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত একটি দলের কেন্দ্রীয় নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, আইডেন্টিটি পলিটিক্স না করলে মুসলিম সমাজ নেতৃত্ব পাবে না। স্বাধীনতার এতদিন শুধু বাম,কংগ্রেস,ফরওয়ার্ড ব্লক,আরএসপি, তৃণমূল করেছে। তার পরেও বিজেপির উত্থান হয়েছে। মুসলিমরা সবাই ধর্মনিরপেক্ষ দলকে ভোট দিলেও কিভাবে বিজেপির উত্থান হল? তাহলে মুসলিমরা কেন নিজস্ব রাজনীতি করবে না?
সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের একটা অংশ মনে করছেন, তাদের নিজস্ব দল থাকা উচিত। এক মুসলিম নেতা বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর সম্পূর্ণ ভরসা করা যায়না। বামফ্রন্ট, কংগ্রেসের আমলের মতো তৃণমূল আমলেও বঞ্চনা আছে। কেউ কেউ আবার ‘সম্প্রীতি’কে উন্নয়ন মনে করে। স্বাধীনতার পর বাংলায় মুসলিমরা সবচেয়ে বঞ্চিত, তারপরেও কিন্তু মিম,মুসলিমলীগ,কিংবা সিদ্দিকুল্লাহর পিডিসিআই বা মুসলিম পরিচালিত দলকে ভোট দেয়নি। মুসলিমরাতো তৃণমূল, কংগ্রেস, বামফ্রন্টের সঙ্গেই আছে। তাহলে বিজেপি ১৮ টি আসন কিভাবে পেল? বিজেপি কেন বাড়ছে? দায় কার?
শোনা যাচ্ছে, আসাদুদ্দিন ওয়েসীর অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিতে পারে। বিহার নির্বাচনের পরেই বাংলায় নজর দিতে পারেন সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েসী। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদা,উত্তর ও দক্ষিন দিনাজপুর সহ বিভিন্ন জেলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের কেউ কেউ বলছেন, আসামের বদরুদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ এখানে ফের কাজ শুরু করুক।
ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী আগেই ঘোষণা করেছেন আগামী বিধানসভায় ৪৪টি আসনে প্রার্থী দেবেন। তবে সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ৪৪টি আসনে না হলেও আব্বাস সিদ্দিকী কুড়ি থেকে তিরিশটি এমন আসনে প্রার্থী দিতে পারেন যেখানে মুসলিম ভোটার বেশি।
আরও বেশ কিছু মুসলিম প্রভাবিত দল বিধানসভায় প্রার্থী দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। এমনকি সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামানও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক জোট করার জন্য ছুটছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু কামরুজ্জামান বারবার বারবার বলছেন, অধিকার নিয়ে সরব হতেই হবে। কিন্তু এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবেনা যাতে বিজেপির লাভ হয়।
আইডেন্টিটি পলিটিক্স করলেতো বিজেপির লাভ? পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর জবাব, কী করে বিজেপির লাভ? ২০১৯ লোকসভায় তো আমি প্রার্থী দিইনি,তাহলে বিজেপি কিভাবে এতগুলো আসনে জিতলো? আর যদি আমার কারণে বিজেপি আসে তাহলে আমি যে আসনগুলিতে প্রার্থী দেবো তার বাইরে ২৫০টি আসনে বিজেপি জিততে পারবে নাতো? ওইসব আসনে বিজেপিকে ঠেকানোর দায়িত্ব তৃণমূল বা বাম-কংগ্রেস নেবে তো? আসলে এইসব একটা বাহানা,মুসলিমদের বঞ্চিত করে,বিজেপির জুজু দেখিয়ে ভোট নেওয়ার কৌশল। শিক্ষিত মুসলিমরা এই চালাকি ধরে ফেলেছে।
জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বিগত বিধানসভায় লড়তে সম্মতি দিলেও একুশে কী হবে বোঝা যাচ্ছে না। জানা যাচ্ছে, মমতার সঙ্গে জোট করে সংগঠন ও মুসলিম সমাজের লাভ ক্ষতির অঙ্ক কষছে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ।
সংখ্যালঘুদের অনেকে আবার বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ চালাচ্ছে। কোনও কোনও নেতা নির্দল বা প্রচলিত সংখ্যালঘু প্রভাবিত দলগুলোর টিকিটে ভোটে লড়তে পারেন। তবে সব ক্ষেত্রে বিজেপি যেন কোনও সুযোগ না পায় সেটা দেখা হচ্ছে।
এক মুসলিম নেতা বলছেন, বিজেপির উত্থান মুসলিমদের নিজেদের মতো করে ভাবতে বাধ্য করছে। যেসব দলের উপর দায়িত্ব ছিল বিজেপিকে ঠেকানোর তারা পারেনি। তৃণমূল, সিপিএম থেকে জিতে আবার বিজেপিতে চলে যাচ্ছে। আজকে যাকে ভোট দিচ্ছেন কাল সে বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বলবে না এমন নিশ্চয়তা আছে? তাই এখন বিধানসভায় সংখ্যালঘু ও দলিত কন্ঠ তুলে আনতে হবে আবার বিজেপিকেউ ঠেকাতে হবে। এটা কঠিন সময়, আর কঠিন সময়েই নেতৃত্ব তৈরি হয়। পরামর্শ করে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করলেও বিজেপিও হারবে আবার বঞ্চিত সমাজ অধিকার নিয়েও সরব হবে।

আসলে মুসলিমদের একাংশ চাইছেন কিছু বিধায়ক বের করে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে সমর্থন দিয়ে সরকার গড়তে।
কিন্তু তৃণমূল বা বাম-কংগ্রেসের টিকিটে জিতে কি সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা হচ্ছে না? এক অধ্যাপক আব্দুল মতিনের জবাব, হচ্ছে কই? যে দল থেকে জিতছে সেই দলের হয়ে কথা বলছে। মুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে তৃণমূল, কংগ্রেস বা সিপিএমের নেতারা সরব হচ্ছে কি? তাই এমন সব আসনে প্রার্থী দিতে হবে যেখানে বিজেপি জিততে পারবে না আবার তৃণমূল কংগ্রেস বা বাম-কংগ্রেসও হারবে। আদিবাসী,সংখ্যালঘু ও দলিত সমাজ বঞ্চিত। সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় তাদের ঐক্য প্রয়োজন।

তবে রাজ্যের কিছু প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠনগুলির নেতারা বলছেন, বিজেপির উত্থান রুখতে আগামী একুশের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের উপরেই আস্থা রাখা উচিত। কেননা,কোনও কারণে ভোট কাটাকাটি হলে তাতে গেরুয়া শিবিরের লাভ।
ওই সব সংগঠনের নেতাদের মতে, তৃণমূল কংগ্রেসের সময় যেভাবে মুসলিম উন্নয়ন হবে বলে আশা করা হয়েছিল তা হয়নি ঠিকই, কিন্তু কোনও হটকারী সিদ্ধান্ত এখন নেয়া ঠিক হবেনা।
এইভাবে একুশের নির্বাচন বহুমুখী ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলিম নেতাদের মধ্যে। কিন্তু শেষমেশ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভোট কোন দিকে যায়,তা ভবিষ্যতই বলবে।

Related Articles

Back to top button
error: