HighlightNewsসম্পাদকীয়

নারী দিবস, ক্ষণিকের ভাবনা আগামীর দিশা

এ. আলী

আজকাল রাস্তায় বেরোলে, বাসে ট্রামে চড়লে, রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে, চোখে পড়ে নানান পোশাক পরিহিতা বিভিন্ন বয়সের নারীদের। কেউ হট প্যান্ট, কেউ শর্টপ্যান্ট, কেউ ফাটা প্যান্ট। কেউবা আবার ছেঁড়া প্যান্ট। এটাই এখন ট্রেনড। আর এই ট্রেনড এ-র উপর ভর করেই সমাজের বিভিন্ন বর্গের, বিভিন্ন বয়সের নারীদের খুল্লামখুল্লা চলাফেরা।

এটা কারো কাছে দৃষ্টিনন্দন। আবার কারো কাছে দৃশ্য দূষণ। কারো কাছে উপভোগের। কারো কাছে অভিযোগএ-র। অনেকে বলেন এটা নারী প্রগতির য়ুগ। এটাই স্বাধীনতা প্রকাশের একটা দিক।

এটাতো স্বীকার করে নিতে হবে যে, যুগে যুগে নারী বঞ্চিতই হয়ে এসেছে। সমাজের কয়েকটি সামান্য বিষয়ের দিকে নজর দিলেই আমরা দেখতে পাই কত বৈষম্য!

জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের মা-বোনেরা আমাদের রান্না করে খাওয়াচ্ছে কিন্তু এই রান্না করা কাজ যখন পেশা হিসেবে গুরুত্ব পেল তখন স্টার হোটেলের রান্নার জায়গা একটা নারীর হলো না। আবার আদিকাল থেকে নারীরা ঢেঁকিতে ধান ভেনে আমাদের চাল-আটা খাওয়ালো, আর যেই এটা ব্যবসায়িকভাবে ভাবা হলো বা মেশিনের দ্বারা করা হল তখন ধানকল পুরুষের আয়ত্তে চলে গেল। যখন ফ্রি কাজ করার দরকার তখন মহিলা আর যখন অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার সম্ভাবনা তখন পুরুষ!

কোন কোন ক্ষেত্রে আবার এটা সমান নয়। সমাজে বৈষম্য আছেই। তাই শুধু নারী দিবস পালন করে থেমে থাকলে হবে না। আনতে হবে সমাজের আমূল পরিবর্তন। পুরুষদের হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, নেক ও বৈষম্যহীন মনোভাবের অধিকারী। তবেই হবে নারী প্রগতি।

এ বিষয়ে কি বলছেন বিশিষ্ট শিক্ষককুল। একজন পুরুষ শিক্ষক ও একজন নারী শিক্ষকের কথা এখানে দেয়া হলো।

উম্মে রুমান                                                                                                                 সহ শিক্ষিকা, নারায়ণপুর হাই স্কুল

নারী প্রগতি কথাটি গুরুগম্ভীর হলেও বাস্তবতা কিন্তু অন্য। কারণ কথাটি এখনো কেবল কথার কথাই হয়ে আছে। নারী শব্দটার প্রতি একটা বিভেদ বা তফাৎ যেন রয়েই গেছে। তাদের প্রগতি এই ভাবনাটা অনেকটা আটকে আছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জন্য। আমরা এখনো এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ থেকে বের হতে পারি না বা বের হওয়ার চেষ্টাও করি না। শুধুমাত্র আমরা দোষারোপ করে বেড়াই। নারী প্রগতি সত্যি সত্যিই কি আমরা চাই? এবং সেই প্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নারীদের ভূমিকাও অনেকটা। স্বাধীন ভাবে স্বাবলম্বী ও তার সঙ্গে সর্বকাজে তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি যেমন প্রত্যেকটি বাড়ি থেকেই শুরু হয় তেমনি নারী প্রগতি প্রত্যেকটি বাড়ি থেকেই শুরু করতে হবে এবং প্রত্যেকটি বাড়ির অভিভাবিকাদের সাহায্যের দরকার। কারণ নারী প্রগতি শব্দটি গৃহকর্তা -গৃহকর্ত্রী কাছে আগে পরিষ্কার করতে হবে এবং সার্বিকভাবেই সমাজের উন্নতির স্বার্থে নারী প্রগতি সত্যিই আমাদের চাই।

বর্তমান বাস্তবিক পরিস্থিতিতে সামগ্রিক অগ্রযাত্রার নিরিখে বাঙালি নারীর অবস্থান আজ অনেক উজ্জ্বল। হয়তো আগামী দিনে আরও উজ্জ্বল হবে তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাথায় বিরাজমান একজন মহিলা প্রধান যিনি গোটা দলটিকে পরিচালনা করছেন। বাঙ্গালী নারীর সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে কাটিয়ে আজ মাটি থেকে আকাশে উড়েছে, শৃঙ্গ জয় করেছে এবং বিজ্ঞানের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর, সুক্ষ থেকে সুক্ষতর বিশ্লেষণের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে নিজেকে পৌঁছে দিয়েছে। তাই বাঙালি নারীর অবস্থান আজ পিছিয়ে নেই আগামী দিনে আরো এগিয়ে যাবে। বাঙালি সমাজে মহিলাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো বেশি বেশি করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। সমাজে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শুধুমাত্র নারী ও পুরুষ এই বিভেদের মাঝে প্রাচীর কে ভেঙে দিয়ে সমান্তরালে একটি পথ করে এগিয়ে যাওয়া খুব দরকার। তার জন্য সবার প্রথম শিক্ষার প্রয়োজন এবং সেই শিক্ষাটি শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার শিক্ষা হলেই হবে না তার সার্বিক বিকাশের জন্য সর্বাঙ্গীণ শিক্ষা প্রয়োজন এবং বাঙালির প্রত্যেকটি নারীর সর্বাঙ্গীণ শিক্ষায় যখন নিজেকে বিকশিত করতে পারবে তখন অটোমেটিক্যালি বাঙালি সমাজে নারী আরো এগিয়ে যাবে এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে। বিশেষ করে মহাকাশে, ডাক্তারি বিদ্যায় স্থাপত্যশিল্পে নারীদের অবস্থান আরো বেশি বেশি প্রয়োজনীয়তা আছে। বাঙালি সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রশাসনিক দপ্তরে। নারী নিরাপত্তা একটি শব্দ যা নারীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মাঝেমাঝেই আটকে দেয় তাই নারী নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেকে সমাজে সহজেই দিনরাতের বিভেদের মধ্যে না রেখে যে কোন সময় চলাচলের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে স্বনির্ভর গোষ্ঠী সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে।

ডঃ কমলকৃষ্ণ দাস (শিক্ষারত্ন)
সহঃ শিক্ষক, ওল্ড মালদা কালাচাঁদ হাইস্কুল, মালদা।

রাজনৈতিক সংরক্ষণ ও নারীর প্রগতি

“বরাবরের মত সমস্ত সংরক্ষণ প্রথার বিরোধিতার কারণেই বিরোধিতা নয়, রাজনৈতিক সংরক্ষণের প্রেক্ষাপটে নারীর অগ্রগতি প্রায় দুই দশক ধরে সমাজে এক কিম্ভূতকিমাকার পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটিয়েছে। সাথে নারীর অগ্রগতি রুদ্ধ করে এনে দিয়েছে তাঁদের পরাধীনতার গ্লানি। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পুরসভা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই সংরক্ষণ প্রথার মাধ্যমে নারীদের নির্বাচনে লড়াই-এর পর বিজয়ী হলেই তাঁদের স্বামীদের আস্ফালন বাড়তে থাকে, তাঁরাই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন। এই অভিশাপ থেকে নারীদের মুক্ত করবার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরো গভীরভাবে ভাবতে হবে। এটা সত্যিকারের নারী প্রগতির বিজয়রথের কাঁটা, এটা দূর করা একান্ত আবশ্যক। মনে রাখতে হবে ইন্দিরা গান্ধী, জয়ললিতা, মমতা ব্যানার্জিদের জন্য কোনো সংরক্ষণ-এর প্রয়োজন হয়নি, এঁরা সকলেই নিজগুণে পারদর্শী হয়ে উঠে এসেছেন সমাজ শিখরে।”

Related Articles

Back to top button
error: