Highlightদেশবিনোদন

লাভ জিহাদ, জঙ্গি গোষ্ঠীতে মুসলিম যোগ নিয়ে আরও একটি সিনেমা ঘিরে বিতর্ক, নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী-সিপিএম-কংগ্রেসের

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: মুসলিমদের লাভ জিহাদ, জঙ্গি গোষ্ঠীতে মুসলিম যোগ নিয়ে আরও একটি বিতর্কিত সিনেমা মুক্তি পেতে চলেছে বলিউডে। আর সেই সিনেমাকে ঘিরেই কেরালা তথা দেশ জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেওয়ার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ তুলে সিনেমাট নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তুলেছেন খোদ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএম, কংগ্রেস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈদিক সংগঠন। আদা শর্মা অভিনীত বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন পরিচালিত সিনেমাটিতে ‘মুসলিমরা লাভ জিহাদের মাধ্যমে অন্য ধর্মাবলম্বিদের নিজ ধর্মে নিয়ে আসেন, বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিতে মুসলিমরা যোগ দিচ্ছে, অন্য ধর্মাবলম্বিদের ধর্ম পরিবর্তন করে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসে ঢোকানো হচ্ছে’ এমন সব দৃশ্য দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি সিনেমার ট্রেলরে দাবি করা হয়েছে, কেরলের ৩২ হাজার মহিলা নিখোঁজ। পরে তারা জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়। সেই দাবি ঘিরেও বিতর্ক শুরু হয়েছে।

কেরলের মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএম, কংগ্রেস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘দ্য কেরল স্টোরি’ সিনেমাটিতে বহু মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। এই সিনেমা প্রসঙ্গে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বক্তব্য, ধর্মনিরপেক্ষ এই রাজ্যকে সন্ত্রাসবাদের রাজধানী হিসাবে তুলে ধরাই সিনেমা নির্মাতাদের আসল উদ্দেশ্য। এর পিছনে সঙ্ঘ পরিবারের ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। দক্ষিণী এই রাজ্যকে বিশ্বের দরবারে বদনাম করাই সিনেমার উদ্দেশে বলে মনে করেন তিনি। এই ছবির তথ্যে বহু মিথ্যা আছে এবং এটি মুসলিমদের ভাবাবেগে আঘাত করবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘ছবি মাধ্যমে সংঘ পরিবার, রাজনৈতিক লক্ষ্য প্রচারে কেরলের ধর্ম নিরপেক্ষ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’ কেরল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা ভি ডি সতীশন দাবি তুলেছিলেন, এই সিনেমার মুক্তি আটকে দেওয়া হোক। সংখ্যালঘু সমাজের উপরে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরির অভিযোগও এনেছেন সতীশন। কেরালার মুসলিম বডির তরফে ঘোষণা করা হয়, কেরালা স্টোরিতে যা দেখানো হয়েছে, তার সত্যতা প্রমাণ করতে পারলে তারা ১ কোটি ১১ লাখ টাকা দেবে।

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, “এই ছবির অনেকটাই মিথ্যে। এর ফলে সংখ্যালঘু শ্রেণীর ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। এ আপনাদের কেরল স্টোরি হতে পারে, আমাদের নয়।” তিনি আরও লেখেন, “বাক স্বাধীনতা খর্ব করা যায় না কারণ সেটির অপব্যবহার হতে পারে। কিন্তু কেরলের বাসিন্দাদের এটা সজোরে বলবার অধিকার রয়েছে যে এটা মিথ্যাচার। আমাদের বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই।” কেরল বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস নেতা ভি ডি সতীশন ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “দ্য কেরল স্টোরি নামে সিনেমায় ৩২ হাজার মহিলার ধর্মান্তরণ এবং পরে তাঁদের আইএসে যোগ দেওয়ার তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। এই ছবি প্রদর্শনের অনুমতি যেন দেওয়া না হয়। ট্রেলর দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এই সিনেমা তৈরির উদ্দেশ্য কী।” এর পাশাপাশিই সতীশনও সঙ্ঘ পরিবারকে নিশানা করে অভিযোগ করেছিলেন, সঙ্ঘ পরিবারের উদ্দেশ্য পূরণ এবং সামাজিক বিভেদ তৈরির জন্যই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। সিনেমা বিশেষজ্ঞদের মতে, মুক্তির আগে বিতর্কের হাওয়া তুলে দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে টেনে নিয়ে যাওয়া বাণিজ্যিক কৌশলেরই অঙ্গ। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু সিনেমার লক্ষীলাভ নয়, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টিও জড়িয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পণ্ডিতেরা।

উল্লেখ্য যে, ১০টি পরিবর্তনের পর মুক্তির ছাড়পত্র পেয়েছে বিপুল শাহ প্রযোজিত ‘দ্য কেরল স্টোরি’। এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করছেন আদা শর্মা, যোগিতা বিহানি, সোনিয়া বালানি এবং সিদ্ধি আদানি। আগামী ৫ই মে হিন্দির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু এবং মালায়ালি ভাষায় মুক্তি পাবে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। ২০১৬ সালে উত্তর কেরালার ২১ জন নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি তৈরি করেছেন বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন। অনেকের মতে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছিল কেরালার ওই ২১ বাসিন্দা। ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র পরিচালক সুদীপ্ত সেন বলেন, “দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে তথ্য ঘেঁটে তবেই এই ছবিটি তৈরি করেছি। কোনও প্রোডিউসর পাচ্ছিলাম না। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলার পর আমার ধারণাই বদলে গিয়েছিল।”

Related Articles

Back to top button
error: