HighlightNewsসম্পাদকীয়

মুক্ত তিস্তা শিতলাবাদ: আশার আলো দেখাচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত

মুহাম্মাদ নূরুদ্দীন: অবশেষে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত মানবাধিকার কর্মী এবং সিটিজেন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস এর মুখ্য পরিচালক তিস্তা শীতল আবাদকে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দান করলেন। তাকে ২৫ হাজার টাকা বন্ডে জামিন দেয়া হয় এবং সেইসঙ্গে তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় তিনি অন্তর্বর্তী কালীন সময়ে কোন বিদেশ সফর করতে পারবেন না। সেই কারণে আদালতে তার পাসপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তিস্তা শিতলাবাদ জানিয়েছেন তাকে দীর্ঘদিন থেকে টার্গেট করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে নানান মামলা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার বাড়ি এবং অফিস বারবার রেড করা হয়েছে। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে লাগাতারভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে।

এতকিছুর পরেও থেমে যাওয়ার পাত্রী নন এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার কর্মী। তিনি ২০০২ সালে গুজরাটে সংগঠিত হিংসা এবং কংগ্রেস এমপি এহসান জাফরী ও তার পরিবারের ৬৮ জন সদস্যের হত্যার বিষয় নিয়ে মামলা লড়ছিলেন। এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি মামলায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের অভিযোগ ছিল তৎকালীন গুজরাট সরকারে থাকার সময় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই হিংসা বন্ধ করার যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেননি নরেন্দ্র মোদি।
দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে এই মামলা চলার পর কিছুদিন পূর্বে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় গুজরাট সহিংসতায় সরাসরি মোদিকে দায়ী করা যায় না। সর্বোচ্চ আদালত তাই এই বিচারের আবেদন বাতিল করে দেয়।

এরপর টার্গেট করা হয় এই মামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবী করেন তিস্তাশিতাবাদ এবং তার সংগঠন সিটিজেন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস তথ্য বিকৃত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কালিমালিপ্ত করতে চেয়েছে। এরপর দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় শীতালাবাদকে। শীতলাবাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশে এবং দেশের বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে কি ঘটেছিল তা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে স্পষ্ট। মানুষের স্মৃতিতে সেই ভয়ংকর দিনের ঘটনাগুলি এখনো জ্বলজ্বল করছে। অথচ সেই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত এবং বিচার চাওয়ার অপরাধে একজন মানবাধিকার কর্মীকে জেলে পোরা হচ্ছে এটা বাক স্বাধীনতা সুবিচার ও নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থী। শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠন তিস্তার জামিনের আবেদন জানালেও গুজরাট হাইকোর্ট তা কর্ণপাত করেনি। তারা তিস্তার জামিনের আবেদনের শুনানি নির্ধারণ করেছে ১৯ সেপ্টেম্বর।
গুজরাট হাইকোর্টের উপর আস্থা রাখতে না পেরে তিস্তার পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন জানানো হয়। প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এস রবীন্দ্র ভাট ও সুধাংশু ধুলিয়া তিস্তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। সর্বোচ্চ আদালত মন্তব্য করেছেন তিস্তার বিরুদ্ধে কোন খুনের মামলা নেই না তার বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় কোন মামলা আছে এবং তার বয়ান নথিভুক্ত করার জন্য পুলিশ যথেষ্ট সময় পেয়েছে তারপরও তাকে জামিন না দেওয়ার কি কারণ থাকতে পারে। সরকারি কৌশলী যখন দাবি করেন তিস্তা খুবই প্রভাবশালী মহিলা। তার জবাবে তিস্তার পক্ষের আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন একজন ষাট ঊর্ধ্ব মহিলা একটি রাজ্য সরকারের থেকে কি করে বেশি শক্তিশালী হতে পারে।

প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই একের পর এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছেন। তিনি মাত্র ৭৪ দিনের জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি হিমালয় প্রমাণ বিচার ব্যবস্থার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না এটা ঠিক কিন্তু তিনি শুরুতেই যে স্বচ্ছতা ও সাহসিকতার ব্যাটিং শুরু করেছেন তা গভীর আধারের মধ্যে এক ঝলক আসার আলো বলা যেতেই পারে। বিগত দিনে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের একাধিক রায়ে শান্তি কামি মানুষ হতাশ হয়েছে। তিস্তার গ্রেপ্তারের পিছনে বর্তমান কেন্দ্রের শাসক দলের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। এবং তার জামিন দেওয়ার বিষয়েও একটি বিশেষ মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল। সবকিছু জানা সত্ত্বেও প্রধান বিচারপতি ও তার দুই সাথী যে সাহসিকতা ও দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন তা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রকৃতপক্ষে এদেশে শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলা কঠিন হয়ে উঠছে। সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে অল্পদিনের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রী ইউ ইউ ললিত যদি দেশে প্রকৃত সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিক প্রয়াস চালিয়ে যান তাহলে সেটাও অনেক বড় পাওনা। জাতি এরকম এক সাহসী বিচারকের জন্য অপেক্ষা করছে।

Related Articles

Back to top button
error: