HighlightNewsদেশ

‘হিন্দু ধর্ম ভারত সহ গোটা পৃথিবীতে বিপদ ডেকে এনেছে, যেখানেই গিয়েছে জাতপাতের বিভাজন সৃষ্টি করেছে’, ডিএমকে নেতার বিতর্কিত মন্তব্যে তোলপাড় দেশীয় রাজনীতি

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ডিএমকের যুব নেতা তথা তামিলনাড়ুর মন্ত্রী উদয়নিধির পর এবার সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দলের প্রবীণ নেতা এ রাজা। তাঁর বক্তব্য, হিন্দু ধর্ম আর ধর্ম নেই। এই ধর্ম শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীর বিপদ ডেকে এনেছে। বিশ্বের যেখানেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গিয়েছেন সেখানেই জাতপাতের বিভাজন কায়েম হয়েছে। তামিললাড়ুতে সনাতন ধর্ম নিয়ে বিবাদ কিছুতেই থামছে না। রাজ্যের শাসক দল ডিএমকে জাতপাত ব্যবস্থার নিন্দা করতে গিয়ে হিন্দুধর্মকে কাঠগড়ায় তোলায় বিতর্ক এখন গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডিএমকে দক্ষিণে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক। বিজেপি তাই দুয়ে দুয়ে চার করে বিরোধী জোটকে কাঠগড়ায় তুলে ভারতে হিন্দুরা বিপদে বলে পাল্টা প্রচার শুরু করেছে। তাতে তামিলনাড়ুর বাইরে জোট শরিকেরা বিপাকে পড়লেও ডিএমকে নেতারা আক্রমণ শানিয়েই চলেছেন।

দিন দশ আগে উদয়নিধি সনাতন ধর্মকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো নির্মূল করার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের পুত্র। ছেলের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে ব্যাট ধরেন স্ট্যালিন। বলেন, আমার ছেলে সনাতন ধর্মের কিছু কূ-প্রথার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। কেউ কি সতীদাহের কথা অস্বীকার করতে পারে। বিধবাদের বিয়েতে আপত্তি কোন ধর্মের বিধান ছিল?

উদয়নিধির বক্তব্য নিয়ে তাতে বিতর্ক থামেনি। জি-২০ সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নির্দেশ দেন উদয়নিধির কথার কড়া জবাব দিতে। তার জবাবে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী কড়া সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর। স্ট্যালিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রীদের এমন নির্দেশ দেওয়ার আগে আমার ছেলে ঠিক কী বলেছে তার টেপ নিজের কানে শুনে নিলে ভাল করতেন।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তামিলনাড়ুর ঘরোয়া রাজনীতিতে সনাতন ধর্ম নিয়ে উদয়নিধির তোলা বিতর্ক ডিএমকে’র জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক হতে পারে। দক্ষিণের ওই রাজ্যে জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াই এবং প্রান্তিক মানুষকে পাশে নিয়েই রাজনীতিতে ডিএমকে’র উত্থান। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সিএন আন্নাদুরাই হিন্দু ধর্মের জাতপাত ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই আজীবন লড়াই করেছেন। রাজ্যের সর্বত্র তাঁর স্ট্যাচুর নিচে সেই লড়াইয়ের উল্লেখ আছে। জাতপাত ও হিন্দু বিধানকে এক করে দেখতেন তিনি। উত্তর ভারতীয় রামায়ণ বর্জনও ছিল তাঁর আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচি। তামিল ভাষায় পৃথক রামায়ণ লেখেন যার সঙ্গে উত্তর ভারতীয় বয়ানের বিশেষ মিল নেই। বস্তুত সেই রাজনীতির কারণেই তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় দল আজও দাঁত ফোটাতে পারেনি। দুই সর্ব ভারতীয় দলকেই ডিএমকে, এআইএডিএমকে, এমডিএমকে’র মতো দলের শরিক হয়ে থাকতে হয়েছে।

কিন্তু তামিলনাড়ুর বাইরে বিশেষ করে উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ভারতে তামিল নেতাদের বক্তব্যে অস্বস্তি বাড়ছে ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলির। এই সুযোগে বিজেপিও ইস্যুটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে। দলের প্রবীণ নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ মঙ্গলবার রাতেও ইন্ডিয়া জোটকে নিশানা করে বলেছেন, বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিপদে পড়বেন।

বসে নেই জোট শরিকেরাও। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ডিএমকে নেতার সনাতন ধর্ম সক্রান্ত মন্তব্যের নাম না করে সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, কারও ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করা উচিৎ নয়। মঙ্গলবার আপ নেতা রাঘব চাড্ডা বলেন, আমি একজন সনাতন ধর্মাবললম্বী। এই ধর্ম সম্পর্কে আপত্তিজনক কথা কেউ বললে আমার খারাপ লাগে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার উদ্ধব গোষ্ঠী তামিল নেতার মন্তব্যের কড়া নিন্দা করে দলীয় মুখপত্র সামনা’য় বড় নিবন্ধ ছেপেছে। তামিলনাড়ু সরকারের শরিক কংগ্রেস উদয়নিধির বক্তব্য পাশ কাটিয়ে বলেছে, দল সব ধর্মের সমান সমাদর করে। অন্যদিকে, বিজেপি উদয়নিধির মন্তব্য লুফে নিয়ে ইন্ডিয়া জোটকেই ধর্মের ইস্যুকে বিঁধতে চাইছে তা স্পষ্ট। সাম্প্রতিককালে আর কোনও ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী থেকে বিজেপির ব্লক সভাপতি, এক ইস্যুতে মুখ খোলেননি। সূত্র – দ্য ওয়াল

Related Articles

Back to top button
error: