HighlightNewsদেশ

মাত্র কয়েক মিনিটে ২ কোটি থেকে জমির দাম বেড়ে হলো ১৮ কোটি! রাম মন্দির জমি বিতর্কের জবাব দিল ট্রাস্ট

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: আগামী বছর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই রাম মন্দির জমি বিতর্ককে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। অভিযোগ রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট রাম মন্দির নির্মাণের জন্য দু কোটি টাকার জমি ১৮ কোটি টাকায় কিনেছে এবং এই মূল্যবৃদ্ধি মাত্র ১০ মিনিটে হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র ১০ মিনিট আগে যে জমির দাম ছিল দু’কোটি টাকা সেই জমির দামই ১০ মিনিট পরে হয়ে গেল ১৮ কোটি টাকা। রাম মন্দির ট্রাস্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে দাবি করা হয়েছে, রাম জন্মভূমি ট্রাস্টকয়েক মিনিটের মধ্যে সাড়ে ১৮ কোটি টাকায় দু’কোটি টাকা দামের জমি কিনেছে। প্রশ্ন উঠছে কি কারণে ট্রাস্ট দু’কোটি টাকা দামের জমি প্রাইম গামে কিনলো এবং কখন, কিভাবে এর অনুমোদন পেল?

রাম জন্মভূমির সাথে মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা জড়িত রয়েছে। অতীতেও রাম মন্দির নিয়ে বহু রাজনৈতিক তরজা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাম মন্দির নির্মাণের সমস্ত ভার যে ট্রাস্টের ওপর দেওয়া হয়েছে সেই ট্রাস্টের বিরুদ্ধেই এহেন জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঘিরে তীব্র হয়েছে রাজনৈতিক কোন্দল।

ওই জমি কেনার দলিলপত্র উদ্ধৃত করে আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিংহ ট্রাস্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সিবিআই তদন্তেরও দাবি করেছেন তিনি। শুধু আম আদমি পার্টির নেতারাই নন, প্রাক্তন মন্ত্রী পবন পান্ডে মানুষের আস্থার সঙ্গে জড়িত রাম জন্মভূমির এই জমি নিয়ে কেলেঙ্কারির একই অভিযোগ তুলেছেন।

তবে জমি কেনা সংক্রান্ত এই সমস্ত অভিযোগ খণ্ডন করে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পাল্টা সাফাই দিয়েছেন রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্রের সাধারণ সম্পাদক এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) নেতা চম্পত রায়। একটি অফিশিয়াল চিঠির মাধ্যমে এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “বাস্তু অনুসারে মন্দিরের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের উন্নতি ও মন্দির চত্বরের সুরক্ষার জন্য ভ্রমণকে সহজলভ্য করার জন্য কয়েকটি ছোট বড় মন্দির এবং গৃহস্থালির বাড়িঘর কেনা দরকার। যাদের কাছ থেকে বাড়ি কেনা হবে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য জমি দেওয়া হবে। এই কাজের জন্য জমি কেনা হচ্ছে।” তিনি আরো বলেন, “শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র এতদিন যত জমি কিনেছে, তার দাম উন্মুক্ত বাজারের দামের চেয়ে অনেক কম। মানুষ রাজনৈতিক বিদ্বেষে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”

তবে, এই সমস্ত আরোপ এবং অভিযোগ সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে তরফ থেকে চম্পত রায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা হুমকি সুরে সাংবাদিকদের বলেন,”আপনারা আপনাদের কাজ করুন। এইসব বিষয়ে ভাবতে হবে না। অভিযোগ নিয়ে কোন কথা বলবো না। আমাদের বিরুদ্ধে ১০০ বছর ধরে অভিযোগ উঠছে।”

অন্যদিকে, রাম মন্দির ট্রাস্টের তরফ থেকে কেনা ওই জমির দস্তাবেজে চম্পত রায় ছাড়া অপর যে ব্যক্তিদের স্বাক্ষর দেখা গেছে তাঁরা হলেন রাম জন্মভূমি ট্রাস্টের আরেক সদস্য অনিল মিশ্র এবং অযোধ্যার পৌরসভার প্রধান ঋষিকেশ মিশ্র। অনিল মিশ্রকেও এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, সাংবাদিকদের প্রশ্নবানের হাত থেকে বাঁচতে কার্যত নিজের গাড়িতে চেপে পালিয়ে যান।

প্রসঙ্গত, আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিংহের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা জমি বিক্রির নথিতে দেখা যাচ্ছে অযোধ্যার হাভেলি অওধ পরগনার সদর তহসিলের বাগ বিজৌসি মৌজায় ১২০৮০ বর্গমিটার এই জমি কুসুম পাঠক নামে এক মহিলার থেকে ২ কোটি টাকায় কিনেছেন সুলতান আনসারী নামে এক ব্যক্তি। উত্তরপ্রদেশ সরকারের রেজিস্ট্রির নথি থেকে দেখা যাচ্ছে, ১৮ মার্চ এই রেজিস্ট্রি হয়েছে। জমির সার্কেল রেট ধরে হিসেব করলে অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত জমির দাম হল ৫.৭৯ কোটি টাকা, কিন্তু, জমিটি কেনা হয়েছে ২ কোটি টাকায়। যদিও সার্কেল রেটের হিসেবেই জমির স্ট্যাম্প ডিউটি স্থির হয়েছে। সেই অর্থে দু’দফায় ৪০ লক্ষ ২৩ হাজার ৯২০ টাকা এবং ৩৪ হাজার ৮৪০ টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপর ওই একই দিনে ওই জমিটি ওই সুলতান আনসারের থেকে ১৮.৫০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছে শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। তার জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়েছে ১.২৯ কোটি টাকা। ট্রাস্টের সভাপতি চম্পত রায়ের ছবি ও সইও রয়েছে রেজিস্ট্রিতে।এই নথি অনুযায়ী একই জমি সরকার নির্ধারিত দামের থেকে কম দামে এক মহিলার থেকে কেনা হচ্ছে অথচ কয়েক মিনিট পরেই সেই জমি প্রায় নগন বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে শ্রীরাম জন্মভূমি ট্রাস্টের কাছে। অভিযোগ,দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছ থেকে যে কোটি কোটি টাকা তোলা হয়েছে মন্দির নির্মাণের নামে, সেই টাকার যথেচ্ছভাবে লুট করা হচ্ছে। ২ কোটি টাকার জমি সাড়ে ১৮ কোটি টাকায় কেনা দেখিয়ে আসলে কয়েক কোটি টাকা কোথায় লোপাট করে দেওয়া হলো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

উল্লেখ্য, একটি হিসেব অনুযায়ী, এখনো পর্যন্ত রাম মন্দির নির্মাণের জন্য ৩২ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদা বাবদ দিয়েছেন দেশের সাধারন মানুষ। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যথেচ্ছভাবে লুট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রাক্তন মন্ত্রী পবন পান্ডে বলেছেন, দেশজুড়ে হিন্দুরা মন্দির নির্মাণের জন্য অর্থ দিচ্ছেন। সেই টাকা এইভাবে লুট করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। পবন পান্ডের দাবি, স্টাম্প ডিউটির অর্থ বাদ দিয়ে বাকি ১৭ কোটি টাকার বেশি কোথায় গেছে তার তদন্ত করে দেখা হোক। তিনি সিবিআই তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন।

আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিংহ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা চম্পত রায়ের এসম্পর্কে দেওয়া একটি যুক্তিকে খন্ডন করে নিজের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে লিখেছেন,”চম্পত রায়ের মিথ্যে প্রকাশ্যে এসে গেছে। উনি বলেছিলেন,’আনসারী এবং তিওয়ারি আগেই হরিশ পাঠকের থেকে সস্তায় রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল পড়ে বেশি দামে বিক্রি করেছে’ অথচ দস্তাবেজের কাগজে পরিষ্কার লেখা আছে,’বিক্রয় কৃত জমির সমস্ত প্রকার সংকট থেকে মুক্ত’তাহলে কি কোন জালি কাগজ তৈরি করছেন চম্পত জী?”

রামের নামে লুটের অভিযোগ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধে এর আগেও বহুবার উঠেছে। এর আগে রাম মন্দিরের নামে বিপুল অর্থ, সোনা-রুপার ইঁটের হিসাব, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কাছে চেয়েছিল অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা। সেসময় অভিযোগ করা হয়েছিল মন্দিরের নামে সংগ্রহ করা অর্থ লুট করছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।আদালতে জমি মামলার শুনানির সময় নির্মোহী আখড়াও অভিযোগ তুলেছিল মন্দির নির্মাণের জন্য ১৪০০ কোটি টাকার অর্থ নয়ছয় করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। মন্দির নির্মাণের রায় আসার পরেও কাদের হাতে সমস্ত ক্ষমতা এবং অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব থাকবে তা নিয়ে এই সংগঠন গুলির মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যস্থতায় সব অংশকেই ট্রাস্টে ক্ষমতার ভাগ দিয়ে সমস্যার নিরসন করা হয়।

Related Articles

Back to top button
error: