রাজ্য

মুর্শিদাবাদের গ্রেপ্তারকৃত যুবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে যৌথ বিবৃতি বিভিন্ন সংগঠনের

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, কলকাতা: মুর্শিদাবাদের গ্রেপ্তারকৃত যুবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে বৃহস্পতিবার যৌথ বিবৃতি দিল বিভিন্ন সংগঠন। ওই বিবৃতিতে একাধিক সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যাক্তির নাম আছে। বিবৃতিটি এখানে তুলে ধরা হল-
‘গত ১৯শে সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহাকুমা অন্তর্গত জলঙ্গি, ডোমকল, রানীনগর থানার বিভিন্ন স্থান থেকে ৬ জন যুবককে এবং ডোমকল মহাকুমা অন্তর্গত ৩ জন যুবককে কেরালা থেকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA-এর বিশেষ টিম। NIA কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র মারফত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে যে, এই ৯ জন যুবক বিভিন্ন ভাবে জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার হয়ে কাজ করছিলো বলে অভিযোগ। যদিও তাদের পরিবার ও এলাকাবাসী যুবকদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ কে মিথ্যা বলে দাবি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা লক্ষ্য করছি গোটা রাজ্যজুড়ে এই গ্রেফতারির বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি মহল নেতিবাচক ভাবধারা গড়ে তোলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপপ্রয়াস চলছে। এই অবস্থায় বিভিন্ন গণ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই যৌথ বিবৃতি পেশ করছি :
১) NIA-এর বিশেষ টিম রাতের অন্ধকারে কয়েকজন যুবকের বাড়ি তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করে। কোন অভিযোগের ভিত্তিতে এই গ্রেপ্তার গ্রেপ্তারকৃতদের ও পরিবারকে জানানো হয়নি বলে পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ। যা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
২) গ্রেফতারির পরে একাধিক সংবাদমাধ্যমে NIA বা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র উল্লেখ করে বিভিন্ন রিপোর্টে এদের ‘আল কায়দা’ জঙ্গি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে সন্ত্রাসী তকমা এঁটে দেওয়া হচ্ছে, অথচ আদালতে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই কিভাবে গ্রেপ্তারকৃতদের সম্বন্ধে এই সিদ্ধান্তে আসা যায়? এটি সংবিধান ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। এই প্রচার জনমানসে ও বিচার প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৩) বাড়িতে সাধারণ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রকে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র, মারণাস্ত্র বলে উল্লেখ এবং ধর্মীয় বই-পুস্তককে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, সাধারণ একটি সেপ্টিকট্যাঙ্ককে গোপন সুড়ঙ্গ বলে প্রচার করা এবং নামায শিক্ষার বইকে (আরবী শেখার বর্ণপরিচয়) আল কায়দার সঙ্গে যুক্ত করা।
৪) একজন সাংবিধানিক প্রধান হওয়ার পরেও রাজ্যপাল এই বিষয়ে আপত্তিজনক বক্তব্য প্রদান করেছেন যা নিন্দাজনক। আমরা মনে করি সাংবিধানিক প্রধানের এই ধরনের মন্তব্য রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য চরম ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে রাজ্যের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যও যথেষ্ট আপত্তিজনক।
৫) ধৃত যুবকদের বিষয়ে আমরা সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। আইন অনুযায়ী সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু কোনো নিরপরাধ যুবককে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তার ন্যায় পাওয়ার অধিকারকে যেন হরণ করা না হয়। ইতিপূর্বে বহু নিরপরাধ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকার পরে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। তাঁরাও একই রকমভাবে তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন অথচ তাঁরা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরে তাদের বিষয়টি কোনো বিশেষ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেনি।
৬) NIA এর এই অভিযান উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা সেই বিষয়ে জনমানসে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার কি এই রাজ্যে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করার জন্য একে তুরুপের তাস হিসেবে কি ব্যবহার করতে চাইছে? ৯ জন সংখ্যালঘু যুবকে গ্রেপ্তার করার পিছনে সাম্প্রদায়িক বিভেদমূলক রাজনৈতিক কৌশল আসল কারণ কিনা ভেবে দেখার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। তাই রাজ্য প্রশাসন বা সরকারের কাছে আমরা এই তদন্তে হস্তক্ষেপ ও এর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকের নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

আবেদনকারীদের নাম:
১. প্রতুল মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত সংগীত শিল্পী।
২. সুজাত ভদ্র, প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী।
৩. প্রসূন ভৌমিক, কবি ও সাহিত্যিক।
৪. মাওলানা আব্দুর রফিক, আমীরে হালকা – জামাআতে ইসলামি হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ।
৫. ত্বহা সিদ্দিকী, ফুরফুরা দরবার শরীফ ও সদস্য – অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড।
৬) ক্বারী মাওলানা শামসুদ্দিন, সাধারন সম্পাদক, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ, পশ্চিমবঙ্গ।
৭. সৌমিত্র দস্তিদার, বিশিষ্ট ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার।
৮. পার্থ সেনগুপ্ত, সভাপতি – সদ্ভাবনা মঞ্চ ও সম্পাদক – বিশ্বকোষ পরিষদ।
৯. অধ্যাপক দীপঙ্কর দে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ।
১০. শরদিন্দু উদ্দীপন, জয়ভীম নেটওয়ার্ক।
১১. মুফতি আব্দুল মাতিন, সাধারণ সম্পাদক – সুন্নাত-অল-জামাআত।
১২. মাওলানা মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক – সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন।
১৩. মাওলানা মারুফ সালাফী, জমিয়তে আহলে হাদীস হিন্দ।
১৪. মাওলানা আলমগীর সর্দার, সাধারণ সম্পাদক – জমিয়তে আহলে হাদীস, পশ্চিমবঙ্গ।
১৫. অধ্যাপক অশোকেন্দু সেনগুপ্ত, প্রাক্তন চেয়ারপার্সন – চাইল্ড রাইটস্ কমিশন।
১৬. নিয়ামত হোসেন হাবিবি, মিল্লি ইত্তেহাদ পরিষদ, কলকাতা।
১৭. মাওলানা শারাফাত আবরার, মজলিশে আহরার-এ-ইসলাম।
১৮. ছোটন দাস, সাধারণ সম্পাদক – বন্দী মুক্তি কমিটি।
১৯. মাওলানা তামিম সিদ্দিকী, সিতাপুর দরবার শরীফ।
২০. আব্দুল আজিজ, সম্পাদক – ফোরাম ফর ডেমোক্র্যাসী এন্ড কমিউনাল অ্যামিটি (FDCA), পশ্চিমবঙ্গ।
২১. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক – আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, কলকাতা।
২২. আবদুস সামাদ, আহ্বায়ক – এসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস্ (APCR), পশ্চিমবঙ্গ।
২৩. মুফতি মাওলানা তাহেরুল হক, দারুল কাযা, পশ্চিমবঙ্গ।
২৪. ওসমান গনি, রাজ্য সভাপতি – এস.আই.ও, পশ্চিমবঙ্গ।’

Related Articles

Back to top button
error: