Newsউপসম্পাদকীয়রাজ্যশিক্ষা ও স্বাস্থ্য

মোদির ১৫ লাখ পাইনি তো কী হয়েছে দিদির ১০ লাখ তো পেয়েছি

মুনির হোসেন,টিডিএন বাংলা :  না মানে আমি নই; জনৈক জুনিয়র বন্ধুর বচনে উপরিউক্ত পঙক্তি। টাকা সে এখনো পায়নি; পাবে কিনা তার সিওরিটিও নেই, তবে হ্যাঁ হয়তো পাবে। অনেক কষ্ট করে মাধ্যমিকের গন্ডি পার করে, উচ্চমাধ্যমিকে সাইন্সে ৪৫৮ পেয়ে জুতো পালিশ করে রোজগার করা বাবার একমাত্র ছেলে পলাশ আজ ফার্স্ট ইয়ারে ফিজিক্সে অর্নাস নিয়ে ভর্তি হয়েছে। কলেজের সেমিস্টার ফি, হোস্টেলে থাকার খরচ, মেসে খাওয়ার ফি, বই-খাতা কেনার  খরচ, গাড়িভাড়া ইত্যাদি মিলিয়ে মিশিয়ে মাসে ৬ হাজার টাকা তো লেগেই যায়। লকডাউনের বাজার, তাই কলেজ বা হোস্টেল হয়তো বন্ধ, কিন্তু বাবার ইনকামও তো বন্ধ। পলাশ বুঝতে পারে তার বাবা আর পারছে না, কিন্তু ওর বাবার স্ট্রিক্ট আদেশ, পড়াশোনার এই জীবনে মনপ্রাণ দিয়ে শুধু পড়াশোনাই করতে হবে, ইনকাম পরে।

এরকম লাখো পলাশের কাছে দিদির ১০ লাখি ক্রেডিট কার্ড আশীর্বাদ স্বরূপ উদিত হয়েছে। তবে ওই যে বলে, এক গ্লাস গরুর দুধে এক ফোটা গরুর চোনা; ১০ লাখি ক্রেডিট কার্ডে ৪ শতাংশ সুদও ঠিক সেরকম। লোন স্যাংসান হওয়ার ১ বছরের মধ্যে ফেরত দিলে কোনো সুদ দিতে হবে না, বাকি শোধ করার সর্বোচ্চ সীমা ১৫ বছর; এটা তো সেই ঘুরিয়ে কান ধরার মতো। যে ছাত্র/ছাত্রীটি পড়াশোনা শেষ করতেই টুয়েলভ এর পর যথাক্রমে ৩ বছর গ্রাডুয়েশান, ৫ বছরে মাস্টার্স, মিনিমাম ১১ বছরে পিএইচডি কমপ্লিট করবে, সে তো অলরেডি বিনাসুদে লোন ফেরত দেওয়ার ১ বছরের সীমা পার করে কয়েক লক্ষ টাকার ভারে (সুদ সহ) জর্জরিত হয়ে যাবে। যেখানে রাজ্যে ৩০০০০ স্টুডেন্টস এমফিল করে কলেজে পড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সেখানে হয়তো আরও ৫০০০০ হাজার যোগ হবে শুধু। সরকারের অবিলম্বে উচিৎ ক্রেডিট কার্ডে বিনা সুদে টাকা ধার দেওয়ার সাথে সাথে এমপ্লয়মেন্ট ক্রিয়েট করা। সরকারি চাকরির সাথে সাথে বেসরকারি চাকরির সুযোগও তৈরি করা। সেই যে সিঙ্গুরে ন্যানো হলো না, আজ এক দশক হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ আর অটোমোবাইল সেক্টরে একটি ন্যনো ইন্ডাস্ট্রিও পেলো না। রোজই কান পাতলেই শোনা যায়, লকডাউনে কাজ হারালো এত হাজার মানুষ; খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে ছাঁটাই এত হাজার। খুচরো দোকান, ছোটো ব্যবসায়ি, অল্প এমপ্লয়ি নিয়ে তৈরি কোম্পানি এবং সমগ্র রাজ্যের কর্মসংস্থানের বর্তমান পরিস্থিতিতো আর অজানা নয়।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমুলকে জিতিয়েছে দায়সারা সরকারের আশায় নয়, বরং দায়বদ্ধ সরকারের আশায়। একটি দায়িত্বশীল সরকার তার অধীনস্থদের রোটি কাপড়া মাকানের সাথে শিক্ষার অধীকার সুনিশ্চিত করবে এটিই তো কাম্য। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে স্টুডেন্টস্ লোন তো ব্যাঙ্ক নিজেই দেয়, মাঝখান থেকে সরকারের নাম কিনতে ঠুঁটো জগন্নাথ গ্যারান্টার হওয়ার কী দরকার যদি উচ্চশিক্ষা লাভ করে পিএইচডি ক্যান্ডিডেট হয়ে ক্লার্কের পদের জন্য ফর্ম ফিলআপ করতে হয়? এই মুহুর্তে ৩৫ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী চাকরির আশায় বিভিন্ন মাধ্যমে অ্যাপ্লাই করেছে। কী দরকার ক্রেডিট কার্ডের হলুদ স্বপ্ন দেখিয়ে উচ্চ শিক্ষিত বেকার তৈরি করার? তাহলে কী স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড কে এককথায় বুঝতে গেলে বলতে হয়” আগে অল্প শিক্ষিত বেকার তৈরি হতো, কয়েকবছর পর উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরি হবে!”

শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক রোগীর সাথে চিকিৎসার সম্পর্কের মতো। রোগ হলে চিকিৎসা ছাড়া যেমন সুস্থতা অসম্ভব, কর্মসংস্থান ছাড়া উচ্চশিক্ষাও তেমন। নয়তো রোগ যেমন দিন দিন বাড়তেই থাকে, বেকারত্ব সমস্যাও তেমনই দিনদিন বাড়তেই থাকবে। গরীব ছাত্র-ছাত্রীরা লোন নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরি বাকরি পাবে না; সুতরাং লোন শোধ দিতে না পেরে ভিটে মাটি, জায়গা জমি বিক্রি করতে বাধ্য হবে, জীবন হয়ে উঠবে কিষান দের মতো; আর বড়লোক বাবুরা লোন নিয়ে উচ্চ শিক্ষিত হয়ে যে কোনো উপায়ে করে নেবে চাকরির ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক বৈষম্য যে আরও প্রকট হয়ে উঠতে চলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

অবিলম্বে সরকারের উচিৎ বিনা সুদে লোন দেওয়া, নয়তো ক্রেডিট কার্ডে শিক্ষার জন্য লোন দেওয়া আর ব্যবসায়িদের ব্যবসায়িক স্বার্থে লোন দেওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না।

Related Articles

Back to top button
error: