HighlightNewsআন্তর্জাতিক

তিউনিশিয়ায় রাজনৈতিক সঙ্কট, বরখাস্ত প্রধানমন্ত্রী, জারি কারফিউ

টিডিএন বাংলা ডেস্কঃ কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব বৃদ্ধি প্রভৃতি অভিযোগে বেশ কিছুদিন ধরেই একাংশের মধ্যে ‍ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। অবশেষে রবিবার রাজধানীতে একটি বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। যেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে। আন্দোলন কারিদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ‍্যাস ছোঁড়ে। অন‍্যদিকে আন্দোলনকারীরা আন্নাহদা পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস ও অন্যান্য অফিসে আক্রমণ চালিয়ে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতি কায়েস সাঈদ প্রধানমন্ত্রী হিচেম মেচিচিকে বরখাস্ত করলেন। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় সংসদও স্থগিত করেছেন। প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্ত কতটা সাংবিধানিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, “বেশ কয়েকবার প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে বলার পরেও পার্লামেন্ট কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই অবশেষে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হলাম।” একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দেন, তাঁর পছন্দের একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে তিনি সরকার পরিচালনা করবেন।প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও অভ্যুত্থান বলে দাবি করেছে আন্নাহদা পার্টি। এ বিষয়ে আন্নাহদা পার্টির নেতা ঘানুচি বলেন, “তিউনিসিয়া তথা বিশ্ব প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তে হতবাক। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অভুন্থানের নামান্তর।” তিনি আরো অভিযোগ, করেন মাত্র একদিন সরকার বিরোধী একটি বিক্ষোভের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অযৌক্তিক। পুরো বিষয়টি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করে আন্নাহদা পার্টি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের ঘোষণার ফলে একদিকে যেমন মিছিল করে আনন্দ উৎসব পালন করতে দেখা গিয়েছে প্রেসিডেন্ট এর সমর্থক ও সরকার বিরোধীদের। অন্যদিকে তেমনি আন্নাহদা সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখান এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এই সিদ্ধান্তের ফলে তিউনিসিয়াতে ব্যাপক রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে গোটা দেশজুড়ে। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সাঈদ বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতা মুকাবিলা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের জন্য এক মাস কারফিউ জারি করা হলো।” জনগণকে কারফিউ মেনে চলতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তিনি আরও বলেন,”আমি সতর্ক করে দিতে চাই কেউ যদি অস্ত্র হাতে নেওয়ার কথা চিন্তা করে..কেউ যদি একটা বুলেটও ছোঁড়ে..তাহলে সশস্ত্র বাহিনী গুলি করেই তার জবাব দেবে।” অবশ্য আন্নাহদার নেতা ঘানুচি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানান, “আমরা মনে করি আমাদের সব প্রতিষ্ঠান এখনও দাঁড়িয়ে আছে এবং আন্নাহদা সমর্থক এবং তিউনিসিয়ার জনগণ এই বিপ্লবকে রক্ষা করবে।” উল্লেখ্য যে, দশ বছর আগে ২০১১ সালে এই তিউনিশিয়া থেকেই শুরু হয়েছিল আরব বসন্ত। এরপর আরব বিশ্বের বহু দেশে স্বৈরতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই তিউনিসিয়াতে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসে আন্নাহদা পার্টি। আসলে আন্নাহদা পার্টি ইসলামপন্থী দল। যারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ তিউনিসিয়াকে ইসলামীকরণেররষ পক্ষপাতি। এর ফলে পশ্চিমা দেশ সহ বহু দেশ আন্নাহদা পার্টিকে ক্ষমতায় থেকে অপসানের জন্য ষড়যন্ত্র করে আসছে বলে বরাবরই অভিযোগ করে আন্নাহদা পার্টি। আন্নাহদা পার্টির দাবি তিউনিসিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন তাদের পক্ষে আছে। তাছাড়া সংসদেও তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ফলে তাঁরা সহজেই হাল ছাড়তে নারাজ। এখন স্বাভাবিকভাবেই তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তারা তিউনিসিয়াতে আবারো গৃহবিবাদের আশঙ্কা করছে। এখন আন্নাহদা পার্টির পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি হয় সেটাই দেখার।

Related Articles

Back to top button
error: