HighlightNewsদেশ

রাম নবমীর মিছিল নিয়ে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, বাংলায় ধুন্ধুমার কান্ড: গ্রেপ্তার ৫০ জনেরও বেশি; আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম, মুসলিম এলাকা দিয়ে যাবেন না, বলেন মমতা

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: বৃহস্পতিবার একদিকে সারা দেশে ধুমধাম করে পালিত হয় রাম নবমীর উৎসব আর অন্যদিকে, কয়েকটি রাজ্যে রাম নবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে বাঁধল ধুন্ধুমার কান্ড, আগুনে জ্বলে উঠল একাধিক গাড়ি। গুজরাটের ভাদোদরা, মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগর-জলগাঁও, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া-ইসলামপুর এবং উত্তর প্রদেশের লখনউতে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের পর একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়, আগুন লাগিয়ে দেওয়া একাধিক গাড়িতে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় পঞ্চাশ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ ও দাঙ্গা বিরোধী বাহিনীও ওইসব এলাকায় অবিরাম টহল দিচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে মুসলিম এলাকা থেকে মিছিল না করার জন্য সতর্ক করে দিয়েছিলাম, কিন্তু বিজেপির লোকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে এই এলাকাগুলিকে টার্গেট করেছে। তারা নিজেরাই দাঙ্গা সৃষ্টি করতে চায়।’

উল্লেখ্য, গুজরাটের ভাদোদরা শহরে রাম নবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে দুটি জায়গায় পাথর ছোঁড়া হয়৷ প্রথম ঘটনাটি বিকেলে ঘটে ফতেপুরা এলাকার পাঞ্জরিগার মহল্লার কাছে, দ্বিতীয় ঘটনাটি সন্ধ্যায় কুম্ভরওয়াড়ার কাছাকাছি ঘটে। পুলিশের মতে, ফতেপুরা এলাকায় এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি, তবে, কুম্ভরওয়াড়ায় রাম নবমীর মিছিলে পাথর ছোঁড়ায় একজন মহিলা সহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পাঞ্জরিগড় মহল্লায় মিছিলের আয়োজন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। অন্যদিকে, দ্বিতীয় মিছিলের আয়োজন করেছিল স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক মনীষা ভাকিল কুম্ভরওয়াড়ার মিছিলের অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিধায়ক বলেন, “যখন মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিল, কিছু লোক হঠাৎ আমাদের দিকে পাথর ছুড়তে শুরু করে। আহত হয়েছেন কয়েকজন নারী। আহতদের মধ্যে কয়েকজন জানিয়েছেন যে আশেপাশের ছাদ থেকে পাথর ছোঁড়া হয়। যদিও, পুলিশ বলছে যে মিছিলটি একটি মসজিদের কাছে পৌঁছলে ঘটনাটি ঘটে এবং লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে শুরু করে। এটা কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়। আমরা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিলে মিছিলটি এগিয়ে চলে।

গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংঘভি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘ভদোদরায় রাম নবমী মিছিলের সময় ফতেপুরা এবং কুম্ভরওয়াড়া এলাকায় পাথর ছোঁড়া হয়েছিল। ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে। ভাদোদরায় অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয়েছে। পাথরবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, বুধবার রাতে মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজিনগরের (পুরাতন নাম ঔরঙ্গাবাদ) কিরাদপুরা এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। লোকজন একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকে লক্ষ্য করেও ঢিল ছোঁড়ে জনতা। হামলায় ১০ পুলিশকর্মী সহ ১২ জন আহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাত সাড়ে এগরোটায় সংঘর্ষ শুরু হয় এবং ভোর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত চলে।
সম্ভাজিনগরের সাংসদ ইমতিয়াজ জলিল বলেন, মদ্যপদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তারাই পাথর ছুঁড়েছে। রাম মন্দিরের কোনো ক্ষতি হয়নি। মন্দিরে কেউ যায়নি। তাই নাগরিকদের গুজবে বিশ্বাস করা উচিত নয়। সম্ভাজিনগরে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকজন ধর্মীয় নেতাকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু জনতা তার কথা শুনতে প্রস্তুত ছিল না।
ওই ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহ বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অভিযোগ, দাঙ্গাকারীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ছোঁড়া হয়। দাঙ্গাকারীরা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িতেও জল ছুঁড়েছে বলে জানা যায়। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে দেখে দুই-তিনবার বাতাসে গুলি চালায় পুলিশ।
এদিক, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বনজর্গ দলের মিছিলে পাথর ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া এবং উত্তর দিনাজপুর জেলায় মিছিল চলাকালীন সহিংস সংঘর্ষ হয় বলে জানা গিয়েছে৷ হাওড়ার শিবপুর এবং উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর শহরের ডালখোলায়ও সংঘর্ষ হয়। হাওড়ার শিবপুরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ওই ঘটনার কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে, যাতে কিছু লোককে বাড়ির ছাদ থেকে মিছিলে ঢিল ছুঁড়তে দেখা গিয়েছে। এরপর মিছিলে থাকা জনতাও পাথর ছোঁড়ে। উত্তেজিত জনতা আশপাশের গাড়ি ও দোকানে আগুন দেয়।
দ্বিতীয় সহিংসতার ঘটনাটি ইসলামপুর শহরের ডালখোলায়। এখানেও মিছিল চলাকালে দুই গ্রুপের মধ্যে তুমুল পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি হয়। এই ঘটনায় এক যুবকের মৃত্যু হয়, আহত হয় পাঁচ-ছ’জন পুলিশ সদস্য। পুলিশ জানিয়েছে, সহিংসতার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সাহায্যে ঘটনাস্থল থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেয়।কয়েকজনকে আটকও করা হয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার জন্য সরাসরি বিজেপিকে দায়ী করেছেন। বিজেপির নাম না করে মমতা বলেন, “তারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য রাজ্যের বাইরে থেকে গুন্ডা ডেকেছে। তাদের মিছিল কেউ থামায়নি কিন্তু তলোয়ার-বুলডোজার নিয়ে মিছিল করার অধিকার তাদের নেই। মমতা বলেন, ‘রুট বদল করলেন কেন? বিশেষ করে একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে আক্রমণ করার জন্য কেন একটি অননুমোদিত পথ বেছে নিল? বিজেপি বরাবরই হাওড়া, পার্ক সার্কাস এবং ইসলামপুরকে টার্গেট করেছে।’

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘টিএমসি মিথ্যা বলছে, কারণ এটি ভুল রুট ছিল না। হাওড়া ময়দান পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি ছিল এবং সেখানে যাওয়ার এটাই ছিল একমাত্র পথ। এখন ভারতে এমন দিন এসেছে যে আপনি কিছু এলাকায় রাম নবমীর শোভাযাত্রা বের করতে পারেন, অন্য এলাকায় নয়।’
বিজেপি নেতা এবং বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, গত বছর হাওড়ার একই জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছিল। এর জন্য আমি কোনো একটি সম্প্রদায়কে দায়ী করছি না। এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোহিঙ্গাদের জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে দিয়েছেন, দেশ তাদের কখনও ক্ষমা করবে না।

উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকেও রাম নবমীতে হিংসার খবর এসেছে। লখনউতে ভীমরাও আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এখানে রাম নবমীতে মিছিল বের করেছিল এবিভিপি-র ছাত্ররা। অপর গ্রুপ এর বিরোধিতা করলে সংঘর্ষ হয়। পরে উভয় গ্রুপই ভিসির কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। তবে বিষয়টি পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।

Related Articles

Back to top button
error: