HighlightNewsদেশ

ক্রমশ বিষাক্ত হচ্ছে দেশের ভূগর্ভস্থ পানীয় জল, ভয়াবহ বিপদের আশঙ্কা! বলছে পরিসংখ্যান

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: দেশে পানীয় জলের গুণমান ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যসভায় বলেছে, দেশের প্রায় সব রাজ্যের জেলার বেশিরভাগ অংশে ভূগর্ভস্থ জলে বিষাক্ত ধাতুর পরিমাণ নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের ২০৯ টি জেলায় ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক এবং ৪৯১ টি জেলায় মাত্রাতিরিক্ত আয়রন পাওয়া গেছে। এগুলো ছাড়াও ভূগর্ভস্থ জলের মধ্যে অধিক পরিমাণে সীসা, ইউরেনিয়াম, ক্রোমিয়াম ও ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে। একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বিশুদ্ধ জল পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরে ৬৬ শতাংশ জল রয়েছে। আমাদের মস্তিষ্ক ৭৫ শতাংশ, হাড় ২৫ শতাংশ এবং রক্তে ৮৩ শতাংশ জল থাকে। একজন মানুষ খাবার ছাড়া এক মাস বাঁচতে পারে, কিন্তু জল ছাড়া মাত্র এক সপ্তাহ। একজন মানুষ তার সারা জীবনে গড়ে ৭৫ হাজার লিটার জল পান করে। সুস্থ থাকতে একজন ব্যক্তির প্রত্যেকদিন কমপক্ষে ২ লিটার জল পান করা উচিত। কিন্তু এই জল পান কী সত্যিই আমাদের সুস্থ করে তুলছে? উত্তর সম্ভবত ‘না’। আসলে, বর্তমান সময়ে আমরা জল পান করছি, কিন্তু তা ‘বিষ’ হয়ে গেছে।

এ বিষয়টি সরকার সংসদে স্বীকার করেছে। রাজ্যসভায় সরকার যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তা কেবল চমকে দেওয়ার মতোই নয়, রীতিমতো ভীতিপ্রদত্ত! এই পরিসংখ্যান আমাদের ভীতির সৃষ্টি করে যে আমরা এখন পর্যন্ত যে জল পান করে আসছি তা ‘বিষাক্ত’। কারণ, দেশের প্রায় সব রাজ্যের বেশির ভাগ জেলাই এমন, যেখানে ভূগর্ভস্থ জলে বিষাক্ত ধাতুর পরিমাণ নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। ২৫ টি রাজ্যের ২০৯ টি জেলার কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের পরিমাণ প্রতি লিটারে ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি। ২৯ টি রাজ্যের ৪৯১ টি জেলার কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ জলে আয়রনের পরিমাণ প্রতি লিটারে ১ মিলিগ্রামের বেশি।

২১ টি রাজ্যে ১৭৬ টি জেলা এমন রয়েছে, যেখানে ভূগর্ভস্থ জলের কিছু অংশে সীসার নির্ধারিত মান লিটার প্রতি ০.০১ মিলিগ্রামের বেশ। ১১ টি রাজ্যের ২৯ টি জেলার কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ জলে ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ প্রতি লিটারে ০.০০৩ মিলিগ্রামের বেশি পাওয়া গেছে। ১৬ টি রাজ্যের ৬২ টি জেলার কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ পানিতে ক্রোমিয়ামের পরিমাণ প্রতি লিটারে ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি পাওয়া গেছে। একই সময়ে, ১৮ টি রাজ্যের ১৫২ টি এমন জেলা রয়েছে যেখানে কিছু অংশে ভূগর্ভস্থ জলে প্রতি লিটারে ০.০৩ মিলিগ্রামের বেশি ইউরেনিয়াম পাওয়া পাওয়া গেছে। জলশক্তি মন্ত্রকের নথি অনুযায়ী, দেশের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ ভূগর্ভ থেকে জল পায়। তাই ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক ধাতুর পরিমাণ নির্ধারিত মান ছাড়িয়ে অর্থ জল ‘বিষ’ যাওয়ার হয়ে উঠছে।

রাজ্যসভায়, সরকার আবাসিক এলাকার সংখ্যাও দিয়েছে যেখানে পানীয় জলের উৎসগুলো দূষিত হয়ে গেছে। এই হিসাবে, ফ্লোরাইড দ্বারা ৬৭১ টি এলাকা, ৮১৪ টি এলাকা আর্সেনিক দ্বারা, ১৪০৭৯ টি এলাকা আয়রন দ্বারা, ৯,৯৩০ টি এলাকা লবণাক্ত, ৫১৭ টি এলাকা নাইট্রেট দ্বারা এবং ১১১ টি এলাকা ভারী ধাতুতে প্রভাবিত। শহরের চেয়ে গ্রামে সমস্যা বেশি। কারণ, ভারতের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি গ্রামে বাস করে। এখানকার পানীয় জলের প্রধান উৎস হ্যান্ড পাম্প, কুপ বা নদী-পুকুর। এখানে জল সরাসরি ভূগর্ভস্থ পানি থেকে আসে। এ ছাড়া গ্রামে সাধারণত এই জল শোধন করার কোনো উপায় নেই। সেজন্য বিষাক্ত জল পান করতে বাধ্য হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মানুষ। এটি সাধারণত মনে করা হয় যে একজন ব্যক্তিকে দৈনিক গড়ে ৩ লিটার জল পান করতে হবে। কিন্তু, সরকারি নথি অনুযায়ী, সুস্থ থাকতে প্রত্যেক দিন কমপক্ষে ২ লিটার জল পান করা উচিত। যদি দৈনিক ২ লিটার জলও পান করা হয় তাহলে তাতে কিছু পরিমাণ বিষও চলে যাচ্ছে । সৌজন্যে- পুবের কলম পত্রিকা

Related Articles

Back to top button
error: