আব্দুস সালাম
একদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যদ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। অন্যদিকে খুচরো বাজারে ৮ বছরে সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে নাজেহাল দেশবাসী। এমনিতেই এদেশের অধিকাংশ পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। কোনো রকমে টেনে টুনে চলে যায় দিনগুলি। একদিন না খাটলে পরের দিন জোটে না দুই মুঠো অন্ন। এমতাবস্থায় আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি ও সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতিতে মাথায় হাত গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির মাথায়। তার উপরে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসাবে যুক্ত হয়েছে কর্মী ছাঁটাই। কর্মসংস্থানের অভাবে অহরহ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোন পথে মিলবে পরিত্রাণ। বা আদেও এই অবস্থার কোনো উন্নতি হবে কি? প্রশ্ন সকলের।
একটু দেখে নেওয়া যাক বর্তমানে ভারতের মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির হাল হকিকত। তাহলেই গরিব ও মধ্যবিত্তের কি অবস্থা হচ্ছে তা কিছুটা আঁচ করা যাবে। প্রথমে মূল্যবৃদ্ধি নিয়েই আলোচনা করা যাক। তারপর আসব মুদ্রাস্ফীতিতে –
বর্তমানে পেট্রোল-ডিজেলের দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। আর রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম সব রেকর্ড ভেঙে ১০০০ টাকা পেড়িয়েছে। রান্নার তেলের দাম ছুঁয়েছে প্রায় ২০০ টাকা। সমান্তরাল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস চাল, আলু, পিঁয়াজ, মশলা থেকে শুরু করে শাক-সবজি সব কিছুর দামও। পেট্রোল, ডিজেল ও গ্যাসের দাম বাড়ায় স্বভাবিক ভাবেই বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম। অন্যদিকে, এপ্রিলে খুচরো বাজারে মুদ্রাস্ফীতি ৮ বছরে সব রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে। যার ফলে ধাক্কা খেতে চলেছে সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার এপ্রিল মাসের খুচরোর মুদ্রাস্ফীতি সূচক প্রকাশিত হতেই রীতিমত চক্ষুচড়কগাছ বিশেষজ্ঞদের। ওই সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) ভিত্তিক খুচরা মূল্যস্ফীতি রেকর্ড হারে বেড়েছে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাবে। এতে দেশের আমজনতা যে আরও কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়তে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল ২০২২-এ ভারতের উপভোক্তা মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৭৯ শতাংশে। মার্চ মাসেই খুচরোর মুদ্রাস্ফীতির হার ৬.৯৫ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ প্রতি মাসেই বৃদ্ধি পাচ্ছে খুচরোর মুদ্রাস্ফীতির হার। এই নিয়ে টানা ৪ মাস রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৬ শতাংশ-এর কাম্য উর্ধ্বসীমা লঙ্ঘন হয়েছে। অথচ গত বছরের এপ্রিল মাসেও এই হার ছিল ৪.২৩ শতাংশ। এক বছরের মধ্যে তা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ হারে! গ্রামীণ ভারত ও শহরাঞ্চলের মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও আবার পার্থক্য আছে। গ্রামের খুচরো বাজারে যেখানে দাম বেড়েছে ৮.৩৮ শতাংশ। সেখানে শহরাঞ্চলে দাম বেড়েছে ৭.০৯ শতাংশ। অন্যদিকে খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রেও একই দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেখানেও মুদ্রাস্ফীতির হারও ক্রমশ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। মার্চ মাসে যেখানে বৃদ্ধির হার ৭.৬৮ শতাংশ ছিল। সেখানে এপ্রিল মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৩৮ শতাংশ। অথচ আগের বছরেও খাদ্যদ্রব্যের মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১.৯৬ শতাংশ। একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, খুচরো বাজারের ন্যায় খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির হারও গ্রামের তুলনায় শহরাঞ্চলে অনেকটাই কম আছে। শহরে ৮.০৯ শতাংশ-এর তুলনায় গ্রামাঞ্চলে খাদ্যের দাম ৮.৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত এই পরিসংখ্যান তৈরি হয়, দেশের ১,১১৪ টি শহুরে বাজার এবং ১,১৮১ টি গ্রাম থেকে দরদামের তথ্য সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে প্রায় ২৯৯ রকমের পণ্যের দামের ভিত্তিতে খুচরা মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের আশঙ্কা পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জিনিসের দাম এখনই কমবে না।
এমতাবস্থায় সব চেয়ে বড়ো প্রশ্ন হচ্ছে কেন্দ্রের মোদি সরকারের কি আদেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের স্বদিচ্ছা আছে? আপাত দৃষ্টিতে এখনও পর্যন্ত তা মনে হচ্ছে না। কারণ মোদি সরকার কর্মী ছাঁটাই, কর্মসংস্থানের অভাবে অহরহ আত্মহত্যা, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে। তারা হিন্দু-মুসলিম, মন্দির-মসজিদ নিয়ে জনতাকে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন অসংখ্য সমাজকর্মী ও রাজনীতিক। তাদের মতে, এই সরকার এই সমস্ত সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। যাতে আমজনতা সরকারকে প্রশ্ন করার পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে এখনই দেশের বেহাল অবস্থা পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।