রাজ্য

দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় চমক মুর্শিদাবাদের ইয়ামিন শেখের, সংবর্ধনা পুলিশের

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, মুর্শিদাবাদ: দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় চমক দিলো মুর্শিদাবাদের ইয়ামিন শেখ। সম্প্রতি সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার ফলাফলে ৬৪৫ নম্বর পেয়ে সারা দেশে ৫০০২ তম স্থান পেয়েছে সে। আগামী দিনে ভাল চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করার ইচ্ছা পোষণ করেছে ইয়ামিন শেখ।

জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির কাবিলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এক প্রত্যন্ত গ্রাম তেঘরী কয়ালপাড়ায় জন্ম ইয়ামিনের। বাবা আবদুস সালাম পেশায় রাজমিস্ত্রী কাজ করেন। মা রোকেয়া বিবি বিড়ি শ্রমিক। ছেলের পড়ার খরচ জোগাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন তিনি। টিনের ও ত্রিপলে দিয়ে তৈরি একটি মাত্র ঘরে চার ভাইবোনের বেড়ে ওঠা। পরিবারে দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে ইয়ামিন। বিশাল সংসার চালাতেই হিমসিম অবস্থার মধ্যেই গত বছর হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসারের হাল ধরতে দাদা রেজাউল করিম লেখাপড়া ছেড়ে রাজমিস্ত্রীর শ্রমিকের কাজে যেতে বাধ্য হয়। মেধাবী, পড়ুয়া, উচ্চ মাধ্যমিককে ভালো রেজাল্ট থাকলেও এক প্রকার রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যায় সে। এক বোনের সদ্য বিয়ে হয়েছে। ছোটো বোন দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া। কিন্তু নিজের পড়াশুনার প্রতি জেদই সফল্যে পৌঁছে দিয়েছে ইয়ামিনকে। কাশিয়া ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ও বালিয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায়, মা বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। ইয়ামিনদের একটি মাত্র ঘর থাকায়, পড়ালেখার অসুবিধা হয়। তাই, বাড়ি ১৫ কিলোমিটার দূরে পিসির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে সে।

পিসি মুনেরা বিবি বলেন, দাদা অসুস্থ কোনো কাজ করতে পারেনা। সংসারে খুব অভাব, তাই আমার ঘরে রেখে ওকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছি। ও আরো অনেক বড়ো হোক, মানুষের সেবা করুক। এইভাবে সে ২০১৯ এ প্রথম নিটে বসে অসফল হন। কিন্তু এবার ৬৪৫ নম্বর নিয়ে দেশে ৫০০২ স্থান দখল করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়।

সদ্য ডাক্তারীতে চান্স পাওয়া ইয়ামিন শেখ বলেন, আমার সাফল্যের পিছনে আমার বাবা মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। একদিন রাতে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, এলাকায় তেমন কোনো চিকিৎসার সুযোগ নেই। বাবার কষ্ট দেখে মনে হয়েছিল, আমি চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করবো। এদিকে ছেলের সাফল্যে গর্বিত ইয়ামিনের বাবা-মা। মা রোকেয়া বিবি বলেন, গরিবের সংসারে বিড়ি বেঁধে কাজ করে দু বেলা দু মুঠো কম খেয়ে ছেলেকে পড়িয়েছি। তার সাফল্যে আমরা খুবই খুশি। ছেলে যেন দেশ ও দশের সেবা করে।

এদিকে অর্থ সংকটকে হার মানিয়ে সাগরদিঘি থানার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের তিন সফল কৃতি ছাত্র-ছাত্রী সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়ায় ইয়ামিন শেখ, আলামীন হোসেন, রুনা খাতুনকে সংবর্ধনা প্রদান করে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা। সোমবার তিনজন কৃতি ছাত্র-ছাত্রীকে সাগরদিঘি থানার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা।

Related Articles

Back to top button
error: