বিহারে শরিকি কোন্দলের গেরোয় জেরবার বিজেপি!
![](https://bangla.tdnworld.com/wp-content/uploads/2020/09/LJP-JDU.jpg)
টিডিএন বাংলা ডেস্ক: সবেমাত্র বিহার বাধাসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যেই শরিক দলের সাথে কোন্দল আর রেষারেষির জেরে জেরবার বিজেপি। ভোটের দামামা বেজে উঠতেই জোরকদমে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল প্রচার। আর সেখানেই সমস্যা। শুরু হয়েছে পোস্টার নিয়ে লড়াই। বলা ভাল, শ্লোগান নিয়ে লড়াই। একদিকে, জেডিইউয়ের হাত ধরে সদ্য এনডিএতে আগত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা হিন্দুস্থান আওয়ামি মোর্চার প্রধান জিতনরাম মাঝি। অপরদিকে, লোক জনশক্তি পার্টির অর্থাৎ এলজেপির সভাপতি চিরাগ পাসোয়ান। এলজেপির প্রতিষ্ঠাতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানের উত্তরসূরি চিরাগ পাসোয়ান নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে নিজেকে বিহারের আসন্ন মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রদর্শন করে পোষ্টটি লিখেছেন “বিহার ফার্স্ট, বিহারী ফার্স্ট”। আর এই স্লোগানে খানিকটা রদবদল করে জিতেন রাম মাঝি তার নির্বাচনী প্রচারের পোস্টারে লিখেছেন,”ফার্স্ট বিহার নিতিশ কুমার”। অথচ, পোস্টারের কোথাও চিরাগ পাসোয়ান বা রামবিলাস পালোয়ানের কোন ছবি নেই। এতেই রীতিমতো অগ্নি শর্মা হয়েছেন এলজেপির বর্তমান সভাপতি চিরাগ পাসোয়ান।
যদিও ওপর থেকে পোষ্টারের লড়াই মনে হলেও আসল লড়াইয়ের শিকড় রয়েছে অনেক গভীরে। মূল টানাপোড়েন হলো দলিত ভোট নিয়ে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই দলিত ভোট নিয়েই টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে এলজেপি এবং নীতীশ কুমারের দলের সাথে। বিহারের প্রায় ১৭ শতাংশ হলো দলিত ভোট। এই দলিত ভোটকে কাজে লাগিয়েই একসময় লোকসভা ভোটে রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন রামবিলাস পাসোয়ান। নিজেকে দলিতদের নেতা হিসেবে প্রচার করলেও সে সময় দলিত ভোটের এই বিপুল পরিসংখ্যান হারিয়েছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। এরপর থেকেই এই দলিত ভোটের ওপরে নজর নিতিশ কুমার ও রামবিলাস পাসোয়ানের। ২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর নিতিশ কুমার মহা দলিতদের নিয়ে ভোটব্যাঙ্ক গড়ে তুলেছিলেন। তবে, ২০১৮ শালী নিতিশ কুমার বিজেপিতে শামিল না হওয়া পর্যন্ত ওই ভোট ব্যাংকের নাগাল পায়নি পাসোয়ানরা। ক্রমশ নীতীশ কুমারের জনপ্রিয়তাই যে তাঁর দলিত ভোটের অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটা ভালো রকমই টের পাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ রাজ নেতা রামবিলাস পাসোয়ান। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে বিজেপির সাথে জোট করে লোকসভা ভোটে ভালো ফলাফল করতে পারলেও, ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছিল এলজেপি। তবে শুধুমাত্র দলিত ভোটারদেরই হাতিয়ার করে নয়, মুসলিম ভোটারদের মধ্যেও নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ব্যস্ত হয়েছেন চিরাগ পাসোয়ান।
অপরদিকে, জিতনরাম মাঝিকে কাজে লাগিয়ে এলজেপির প্রত্যাশিত দলিত ভোটে কোপ ফেলেছেন নিতিশ কুমার। তাই জিতন রাম মাঝিকে এনডিএর শরিক হিসেবে মানতে নারাজ এলজেপি। এমনকি বিহারের জোট শরিক হিসেবে জেডিইউ এর দাপটও সহ্য করছে না এলজেপি। তাই একরকম নিতিশ কুমার কে জব্দ করতেই বিহারের ১৪৩ টি বিধানসভা আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলজেপি।
এছাড়া, রামবিলাস পাসোয়ান আগামী বছর ৭৫ এ পা দেবেন। সেই অনুযায়ী, বিজেপির শরিক না হলেও দলীয় নিয়ম অনুসারে কেন্দ্রীয় মন্ত্র হাতছাড়া হতে পারে তাঁর। সে ক্ষেত্রে নিজের উত্তরসূরি চিড়া পাশওয়ান কে কেন্দ্রের চোখে বিহারের এক অপরিহার্য নেতা হিসেবে তুলে ধরা খুবই জরুরী হবে এলজেপির কাছে। তাই নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে নিজেকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত হয়েছেন চিরাগ। আর এই শরীরকে কোন দলের মাঝে পড়ে রীতিমতো ফেঁসে গেছে বিজেপি। একদিকে জেডিইউ, তো একদিকে এলজেপি। কাউকেই ছাড়তে পারছে না বিজেপি। কারণ শরিকি কোন্দলের জেরে যদি একজন যদি জোট ভেঙে বেরিয়ে যায় বা চটে যায়, তাহলে লাভের গুড় বিরোধীদের কপালেই জুটবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।