HighlightNewsদেশ

ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের বৈঠক: দুটি আইন চলতে পারে না, বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ২৭ জুন ভোপালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একটি ভাষণে ইউসিসির কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিজেপির ১০ লক্ষ বুথ কর্মীকে সম্বোধন করে সারা দেশে অভিন্ন সিভিল কোড (ইউসিসি) শীঘ্রই বাস্তবায়ন করার কথা বলেছিলেন মোদি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে জনগণকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। পসমন্দা মুসলিম রাজনীতির শিকার হয়েছেন। একটি বাড়ি দুটি আইনে চলতে পারে না। বিজেপি এই বিভ্রান্তি দূর করবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে, কংগ্রেস, এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সহ বিরোধীদের অনেক নেতা এটিকে মূল বিষয়গুলি থেকে নজর সরানোর প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।

ইউসিসির নিয়ে এই আলোচনার শুরু হওয়ার পর গতকাল গভীর রাতে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড (এআইএমপিএলবি) একটি জরুরি বৈঠক ডাকে। তিন ঘন্টা ধরে চলা এই বৈঠকে বোর্ড প্রস্তাবিত ইউসিসি আইনের বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভার্চুয়াল বৈঠকের সময়, এআইএমপিএলবি সভাপতি সাইফুল্লাহ রহমানি, ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি এবং এআইএমপিএলবি সদস্য মাওলানা খালিদ রশিদ ফারাঙ্গি মাহলি, এআইএমপিএলবি-এর আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

মাওলানা খালিদ রশিদ বলেন, আমরা একটি খসড়া তৈরি করেছি, যাতে শরীয়ত আইনের কথা বলা হয়েছে। শিগগিরই তা আইন কমিশনে পাঠানো হবে। আমরা আইন কমিশনের সামনে আমাদের মামলা কার্যকরভাবে উপস্থাপন করব। প্রতিবারই নির্বাচনের আগে রাজনীতিবিদরা ইউসিসির প্রসঙ্গ তোলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পুনরায় এই বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করছে আইন কমিশন। প্রতিবেদন তৈরি করতে ইউসিসির বিষয়ে জনগণের মতামতও চেয়েছে কমিশন।  মুসলিম ধর্মগুরুদের সংগঠন জেইউএইচ-এর সেক্রেটারি নিয়াজ আহমেদ ফারুকী বলেছেন, ইউসিসিতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আইন কমিশনকে প্রভাবিত করতে পারে। দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে এটি তার মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং ইউসিসি সম্পর্কে এমন প্রকাশ্য বিবৃতি দেওয়ার আগে তার আইন কমিশনের সাথে পরামর্শ করা উচিত ছিল।

এআইএমআইএম প্রধান এবং হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিশানা করেছেন।  তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ইউসিসির কথা বলছেন, তখন তিনি হিন্দু সিভিল কোডের কথা বলছেন।

ওয়াইসি আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ধারা ২৯ বোঝেন না। ইউসিসির নামে কিভাবে দেশের বৈচিত্র্য ছিনিয়ে নেওয়া যায়।  অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টির সাংসদ এসটি হাসান বলেন, আমরা হাদিসের নির্দেশ ছাড়তে পারি না। সংবিধান প্রত্যেক মানুষকে তার ধর্ম প্রচারের অধিকার দিয়েছে।

কংগ্রেস নেতা এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের কার্যনির্বাহী সদস্য, আরিফ মাসুদ বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত যে তিনি ভীমরাও আম্বেদকরের তৈরি সংবিধান গ্রহণ করেছিলেন। দেশের সব অংশের সংবিধানের প্রতি আস্থা রয়েছে এবং তা পরিবর্তন হতে দেবে না।

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর বলেন, যতদূর প্রশ্ন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে, তখন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু বলেছিলেন যে ইউসিসি থাকতে হবে কিন্তু আমাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। আপনি কোনো দেশের কোনো একটি বর্গকে ভুলতে পারবেন না।

ইউসিসি ছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী ভোপালে তিন তালাকের বিষয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, তিন তালাক ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হলে বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো তা বাতিল করত না। মিশরের ৯০% এরও বেশি সুন্নি মুসলিম। তিন তালাকের প্রথা ৮০-৯০ বছর আগে শেষ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র এসকিউআর ইলিয়াস বলেন, এই বিষয়ে ভারতে একটি আইন করা হয়েছে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর এই আলোচনার মানে কী? তিন তালাক উচ্চারণকারী স্বামীর জন্য শাস্তির বিধান রাখা এই আইন কোনোভাবেই নারীকে সাহায্য করে না। এটি মহিলাদের অর্ধেক পথে ছেড়ে দেয়। পরে তাদের দীর্ঘ যুদ্ধ করতে হয়।  আগে সরকারকে এসব ঠিক করতে হবে।

 

একইসঙ্গে, পাকিস্তানে কেন তিন তালাক নেই?  প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাবে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের তরফে বলা হয়, ‘অন্য দেশের সাথে তুলনা ভালো নয়’। প্রধানমন্ত্রী তিন তালাক সম্পর্কে বলেছিলেন যে এটি যদি ইসলামের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয় তবে তা পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, জর্ডন, সিরিয়া, বাংলাদেশে কেন নেই।  এর জবাবে ইলিয়াস বলেন, ‘অন্য মুসলিম দেশগুলো কী করছে, ইসলামে ভিন্ন মতাদর্শ আছে তা বোঝা জরুরি। কোনো দেশ আগে এটা বাতিল করলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।  অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক নয়’।

ইলিয়াস আরও বলেন, বারবার তিন তালাকের ওপর জোর দেওয়া দেখে মনে হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে এটা খুবই সাধারণ বিষয়।  প্রকৃতপক্ষে, এটি স্থল বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে কারণ, মুসলমানদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার কম এবং ইসলাম সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদকেই শেষ উপায় হিসাবে বিবেচনা করে।

Related Articles

Back to top button
error: