মুহাম্মদ নুরুদ্দিন, টিডিএন বাংলা:
“চিত্ত যেথা ভয় শূন্য
উচ্চ যেথা শীর”
এই রকম এক পরিবেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলে তুমি। উদার হৃদয় আর কুসংস্কার মুক্ত মন ছিল তোমার স্বপ্নের স্বদেশের ধারণা। সকল মানুষকে তুমি সমান দৃষ্টিতে দেখতে শিখিয়েছ। তুমিই শিখিয়েছ মানুষকে ছোট করে দেখার মত পাপ আর কিছু নেই। “দয়াহীন সংসারে” তুমি বার বার ভালোবাসার বাণী শুনিয়েছ। “অন্তর হতে বিদ্বেষ-বিষ” নাশ করার আহবান বিশ্ব মানবতাকে পথ দেখিয়েছে। কিন্তু আজ আমরা আকন্ঠ বিদ্বেষের গরল পান করে বসে আছি। আমরা শুধু কুসংস্কারকে গ্রাস করে বসে আছি তাই নয় গরুর দুধে সোনা খুঁজতে খুঁজতে কুসংস্কারটাই আমাদের কাছে সংস্কারে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা করনা ভাইরাস তাড়াতে থালা বাজাই, গোমূত্র পান করি, আমাদের কাছে অজ্ঞতাই জ্ঞান, কুসংস্কারই বিজ্ঞান। আমাদের অলীক কল্পনাই ঐতিহাসিক বাস্তবতা, আর বৈজ্ঞানিক সত্যের উপর প্রাধান্য পায়। এত কিছুরপরও আমরা তোমার ভক্ত বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করিনি। নিয়মিত তোমার মূর্তিতে মালা পরিয়েছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্বজুড়ে গর্ব করতে আমরা কসুর কিরিনি।
সর্বত্র আমরা কালিমা লাগালেও শেষ ভরসা ছিল তোমার স্বপ্নে গড়া বিশ্ব-ভারতী। কিন্তু ক্ষমা কর ঠাকুর, তোমার শান্তি নিকেতনকেও আমরা ছেড়ে কথা বলিনি। শান্তির নিকেতনে এখন অশান্তির কালো মেঘ। তুমি বলেছিলে ‘‘সকল জাতির সকল সম্প্রদায়ের আমন্ত্রণে এখানে আমি শুভবুদ্ধিকে জাগ্রত রাখবার শুভ অবকাশ ব্যর্থ করি নি।’’ কিন্তু আমরা তোমার শুভ চেতনাকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়নি। তুমি যাকে রোগ বলে নির্ণয় করেছ আমরা তাকে মহৌষধ বলে সেবন করেছি। তুমি বলেছিলে ‘‘অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে এক-চেতনাসূত্রের বিচ্ছেদই সমস্ত দেহের পক্ষে সাংঘাতিক। সেইরূপ, ভারতবর্ষের যে মন আজ হিন্দু বৌদ্ধ জৈন শিখ মুসলমান খৃস্টানের মধ্যে বিভক্ত ও বিশ্লিষ্ট হইয়া আছে সে মন আপনার করিয়া কিছু গ্রহণ করিতে বা আপনার করিয়া কিছু দান করিতে পারিতেছে না।’’
তাই তুমি চেয়েছিলে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। আমরা আজ বিচ্ছিন্নতাকে ঐক্য বলে ভাবছি গরলকে অমৃত সুধা বলে পান করছি। ক্ষমা কর ঠাকুর তুমি আমাদের ক্ষমা কর।