দেশ

বিরোধীদের চরম বিরোধের মধ্যেই লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল বিতর্কিত দুটি কৃষি বিল; প্রতিবাদে সংসদের রুল বুক ছিঁড়ে ফেললেন ডেরেক ও’ব্রায়েন

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও পাস হয়ে গেল কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি সম্পর্কিত দুটি বিল। রবিবার রাজ্যসভার সপ্তম অধিবেশনের দিন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার বিতর্কিত দুটি কৃষি বিল পেশ করেন। এই বিল নিয়ে রাজ্যসভায় বিরোধীদের চরম বিরোধিতার মধ্যেও ফারমার্স অ্যান্ড প্রডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স এবং এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যাসুওরেন্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিস বিল দুটি ধ্বনি মতে পাশ হয়ে যায়। এর বিরোধিতায় স্পিকার ওম বিড়লার সামনে এগিয়ে এসে রাজ্যসভার রুলহক ছিঁড়ে ফেললেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।

রবিবার, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার বিতর্কিত বিয়ে দুটি পেশ করতেই এই বিলের বিরোধিতায় সরব হন বিরোধী রাজনৈতিক দল নেতারা। চরম বিরোধিতায় এবং আক্রোশে শুধু মাত্র রুল বুক ছিঁড়ে ফেলে ক্ষান্ত হননি ডেরেক ও’ব্রায়েন, উপ-সভাপতি হরিবংশের মাইক ভেঙে দেওয়ারও প্রচেষ্টা করেন তিনি। পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে রাজ্যসভার কার্যপ্রণালী চালু রাখতে সংসদীয় কক্ষে মার্শালের ডাকতে হয়। ১০ মিনিট পর্যন্ত সংসদের কার্যপ্রণালী স্থগিত থাকার পর ফের ভোটিং প্রক্রিয়া শুরু হলে চরম বিরোধিতার মধ্যেও দুটি বিতর্কিত বিলি পাস করিয়ে নেয় কেন্দ্র সরকার।

কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার বলেন, “এই দুটি বিল ঐতিহাসিক। এর ফলে কৃষকদের জীবন বদলে যাবে। কৃষকরা সারাদেশের যেকোনো জায়গায় নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারবেন। আমি কৃষকদের আশ্বাস দিতে চাই যে এই বিলের সঙ্গে ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের কোন সম্পর্ক নেই।”

এদিকে এই বিলের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের প্রতাপ সিংহ বাজবা বলেন, উনি এবং ওনার দল কোনভাবেই কৃষকদের “ডেথ ওয়ারেন্টে” স্বাক্ষর করবেন না। এই বিলের চরম বিরোধিতা করে রাহুল গান্ধীও কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলেন, “মোদীজি কৃষকদের পুঁজিপতিদের গোলামে পরিণত করছেন, যা দেশ কখনো সফল হতে দেবে না।”

অপরদিকে, কংগ্রেসকে পাল্টা জবাব দিয়ে ওয়াইএসআরসিপি সাংসদ পিপি রেড্ডি বলেন,”কংগ্রেসের কাছে এই বিলের বিরোধিতার কোন কারণ নেই। কংগ্রেস দালালদের সমর্থন করছে।”শুধু তাই নয়, তিনি কংগ্রেসের নির্বাচনী ঘোষণাপত্র দেখিয়ে দাবি করেন, এই দল কৃষকদের ভালো করার নামে আদতে দুর্নীতি করছে। কংগ্রেসও এই একই প্রতিশ্রুতি কৃষকদের দিয়েছিল তার ঘোষণাপত্রে যা এই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পিপি রেড্ডির মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে কংগ্রেসের বড়িষ্ঠ নেতা আনন্দ শর্মা রেড্ডিকে তাঁর বয়ানের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছেন।

আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকেও কৃষি বিলের বিরোধিতা করা হয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির সভাপতি আরবিন কেজরিওয়াল সমস্ত অবিজেপি নেতাদের কাছে এই বিলের বিরোধিতায় ভোট করার আবেদন জানান। আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় রাউত কেন্দ্রে মোদি সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন,”সরকারকে এটা স্পষ্ট করে বলতে পারবে যে এই আইন লাগু হবার পর কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে? কৃষকরা আত্মহত্যা করবেন না?”

বিএসপি সাংসদ সতীশ চন্দ্র মিশ্র বলেন, কৃষকরা এমএসপি নিয়ে সংশয় রয়েছেন। তারা এমএসপি অর্থাৎ ন্যূনতম সমর্থন মূল্য শেষ হয়ে যাবার ভয় পাচ্ছেন। সরকারের এই বিষয়গুলোর স্পষ্টীকরণ করা উচিত। এছাড়া কৃষি বাজার সমিতিতে আগের মত নেই বিক্রি জারি থাকবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএসপি সাংসদ।

অকালি দলের সাংসদ নরেশ গুজরাল এই বিলকে সিলেট কমিটির কাছে পাঠানোর আবেদন করেন। তিনি বলেন এই বিলে অনেক অসম্পূর্ণতা রয়েছে।এই বিলের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তা বলার পরেই এই বিল পাশ করা উচিত।

আরজেডি সাংসদ প্রফেসর মনোজ কুমার ঝা বলেন,”প্রধানমন্ত্রী মোদী বলছেন যে কৃষি বিল নিয়ে কিছু লোক কৃষকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন, যেখানে আসল সত্যিই এটা যে আপনারা তো সবার রাস্তাই বিভ্রান্ত করে দিয়েছেন। বিলে অনেকগুলি জিনিস অস্পষ্ট রয়েছে। এটা কৃষক বিরোধী বিল।”

তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন,২০২২ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র সরকার কৃষকদের রোজগার দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যদিও বর্তমান দরের হিসেবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হওয়া সম্ভব নয়।

এছাড়া, অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর চরম বিরোধিতা করে এই কৃষি বিলের। যদিও এই চরম বিরোধিতার মধ্যেও লোকসভার পর এবার রাজ্যসভাতেও পাস হয়ে গেল বিতর্কিত দুটি কৃষি বিল। শীঘ্রই আইনে পরিণত হতে চলেছে এই দুটি কৃষি বিল।

Related Articles

Back to top button
error: