দেশ

করোনায় অভিভাবকহীন ১৫ লক্ষ শিশু , ভারতেই লক্ষাধিক : ল্যানসেট রিপোর্ট

টিডিএন বাংলা ডেস্ক :  কোভিড ভাইরাসের আক্রমণে সারা বিশ্বে প্রাণ হারিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ভয়ের ছবি দেখিয়েছে করোনা। আর এবার আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে উঠে এল আরও এক মর্মান্তিক তথ্য। তাদের সমীক্ষায় দাবি, করোনা সংক্রমণের প্রথম ১৪ মাসে সারা বিশ্বের ২১টি দেশে ১৫ লক্ষেরও বেশি শিশু বাবা, মা সহ অভিভাবককে হারিয়েছে। যার মধ্যে শুধু ভারতেই এই সংখ্যাটা ১ লক্ষ ১৯ হাজার। মার্চ ২০২০ থেকে শুরু করে এপ্রিল ২০২১ এ সময়ের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়েছিল ল্যানসেট ।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউস দ্য ল্যানসেটের এই সমীক্ষায় অংশ নেয়। সমীক্ষা শেষে ল্যানসেট জানিয়েছে, ২৫ হাজার শিশু তাদের মাকে হারিয়েছে। ৯০ হাজার ৭৫১ জন শিশুর বাবার মৃত্যু হয়েছে। ১২ শিশু হারিয়েছে বাবা এবং মাকে।
ল্যানসেটের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বজুড়ে বাবা এবং মাকে হারিয়ে দাদু-দিদা-ঠাকুরদা-ঠাকুমার কাছে রয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা ১১ লক্ষ ৩৪ হাজার। মোট ১০ লক্ষ ৪২ হাজার শিশু বাবা এবং মা দুজনকেই হারিয়েছে করোনাকালে।

বাবা বা মা অথবা অভিভাবককে হারিয়েছে এমন শিশুদের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, কলোম্বিয়া, ইরান, আমেরিকা, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউসের ডিরেক্টর নোরা ডি ভলকো বলেন, বাবা বা মা অথবা অথবা অভিভাবকের মৃ্ত্যুর পরে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় শিশুর। যা তার ভবিষ্যতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন ওই শিশু মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।

দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দাদু-দিদা-ঠাকুরদা-ঠাকুমাকে হারিয়েছে এমন শিশুর সংখ্যা ২ হাজার ৮৯৮। শতাংশের হিসেবে বাবা বা মাকে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ৬.৪ শতাংশ শিশু, ব্রাজিলের ৩.৫ শতাংশ, পেরুর ১৪.১ শতাংশ, মেক্সিকোর ৫.১ শতাংশ, রাশিয়ার ২ শতাংশ, আমেরিকার ১.৮ শতাংশ শিশু। রিপোর্ট অনুযায়ী, একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া প্রতিটি দেশেই মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মৃত্যু সংখ্যা বেশি

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনা বা কোভিড-১৯। এতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে এ পর্যন্ত ৪১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বজুড়ে অসংখ্যা শিশু এতিম হয়েছে ল্যানসেট তাদের সমীক্ষাতে আরো জানায়, অভিভাবকহীন হওয়ার ফলে শিশুদের সারাজীবনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। বিশ্বজুড়ে এত শিশু অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় স্বাভাবিকভাবে এক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে গেল।

ভারতে মহিলা ও শিশু বিকাশ (ডাব্লুসিডি) মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, এ বছর এপ্রিল থেকে ২৮ শে মে পর্যন্ত মোট ৬৪৫ জন শিশু তাদের পিতামাতাকে কোভিড -১৯ এ হারিয়েছেন।

মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের জবাবে কোভিড -১৯-এর দ্বিতীয় তরঙ্গ চলাকালীন এতিম শিশুদের তথ্য দিয়েছেন।

এই জাতীয় শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যা উত্তরপ্রদেশ থেকে ১৫৮, অন্ধ্র প্রদেশ থেকে ১১৯, মহারাষ্ট্র ৮৩ এবং মধ্য প্রদেশ থেকে ৭৩ জন।

ইরানি আরও বলেছিলেন যে, বাবা-মা হারানো বাচ্চাদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রনালয় এবং স্কুল শিক্ষা ও সাক্ষরতা অধিদপ্তর (ডিএসইএল), শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে যৌথভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন যে মহামারীজনিত কারণে পিতা-মাতা বা বেঁচে থাকা পিতা-মাতা বা আইনী অভিভাবক বা দত্তক পিতামাতা উভয়কেই হারিয়েছেন এমন শিশুদের সমর্থন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছেন

Related Articles

Back to top button
error: