দেশ

ভাগবত নামে একজন মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের বলতে পারেন যে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত? প্রশ্ন তুললেন আসাদুদ্দিন ওয়েসি

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ভারতে মুসলমানরা সুখেই আছেন। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করলেন এআইএমআইএম সভাপতি আসাদউদ্দিন ওয়েসি। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন,”আমাদের সুখের পরিমাপ কী? ভাগবত নামে একজন মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের বলতে পারেন যে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত? আমাদের সুখের পরিমাপ হল সংবিধানের অধীনে আমাদের মর্যাদাকে সম্মান করা হচ্ছে কি না।”

মোহন ভাগবতের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসাদউদ্দিন ওয়েসি আরো লেখেন,”আমাদের এটা বলতে আসবেন না যে আমরা কতটা সুখী যখন আপনাদের মতাদর্শ হলো মুসলমানদের দ্বিতীয় বর্গের নাগরিক হিসেবে প্রতিপন্ন করা। আমি আপনার কাছ থেকে এটা শুনতে চাই না যে, আমাদের নিজেদের দেশে থাকার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভালোর তালিকা থাকতে চাই না, আমরা বিশ্বের মুসলিমদের সাথে সবচেয়ে সুখী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেই, আমরা কেবল আমাদের মৌলিক অধিকার চাই।”

প্রসঙ্গত, এর আগে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন নয়। বরং সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সব থেকে সুখে আছে। শুধু তাই নয় রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত বলেন যে, এমন ধর্মের পালন করে মুসলিমরা ভারতে সুখে আছেন যার উৎস ভারতে নয়।

একটি আরএসএস ঘনিষ্ঠ পত্রিকা ‘বিবেক’-এ দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে মোহন ভাগবত বলেন, “কোন দেশের মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি সুখী? ভারতের মুসলিমরা। এমন কি অন্য কোনো দেশ রয়েছে যেখানে যে ধর্মের উৎপত্তি নেই তা ক্ষমতায় থেকেছে এবং এখনও সেখানে আছে? ভারত ছাড়া এরম আর কোনো দেশ নেই। এক রক্তাক্ত ইতিহাস থাকা সত্বেও মুসলিমরা এখনও এখানে রয়েছে, খিস্টানরা এখনো এখানে রয়েছে। যখন ভারতবর্ষ তৈরি হয়েছিল তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী ভারত বলতে পারত যে, এখন পাকিস্তান আছে মুসলিমদের জন্য এবং এখানে হিন্দুদের রাজত্ব চলবে। কিন্তু আমাদের সংবিধানে এমন বলা হয় নি। আমাদের সংবিধান সমস্ত মানুষকে একত্র করেছে। এটাই আমাদের স্বভাব। এই স্বভাবকেই হিন্দুত্ব বলে।”

ভাগবত আরো বলেন,”আমরা কর আরাধনা করি তার ওপর নির্ভর করে না আমাদের হিন্দু হওয়া। ধর্ম হল সেটা যা আমাদের একত্রিত করে, আমাদের এগিয়ে রাখে এবং সমাজকে ধরে রাখে। এটি এমন যা অনুসরণ করা হলে কেউ বৈষয়িক এবং আধ্যাত্মিক সুখ পেতে পারে।আপনার প্রার্থনার উপায় যাই হোক না কেন, জাতীয়তার সঙ্গে পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের দেখতে হবে যাতে মৌলবাদ যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা যেন বাতাস না পায়। আমরা এমন একটি দেশ যা সেই সময় থেকে অস্তিত্বে রয়েছে যখন আমরা হিন্দুরাষ্ট্র ছিলাম। আমাদের যা করতে হবে তা হল সংকীর্ণতা এবং দূষিত মনোভাব ত্যাগ। এখানে শীর্ষ স্তরে কর্মরত উচ্চশিক্ষিত এবং শক্তিশালী এমন অনেক মুসলমান এবং খ্রিস্টানরা রয়েছেন যারা এটা মানেন।”

এরপর কাশি এবং মথুরা মন্দির নিয়ে আরএসএস কোন বিক্ষোভ দেখাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মোহন ভাগবত বলেন,”আমরা জানি না কারণ আমরা সেই দল নেই যারা বিক্ষোভ দেখায়। আমরা রাম জন্মভূমি বিক্ষোভ শুরু করিনি। এটা আমাদের সমাজে বহুবছর ধরে চলে আসছিল।আমরা এমন মানুষ যারা শান্তিপূর্ণভাবে মূল্যবোধের মাধ্যমে হৃদয়ের পরিবর্তন আনয়ন করি। হিন্দু সমাজ কী করবে আমার কোনও ধারণা নেই। আমি কেবল এটুকুই বলতে পারি যে আমরা আন্দোলন শুরু করব না।”

মোহন ভাগবত আরো বলেন,’মহারানা প্রতাপের সৈন্য দলে অনেক মুসলিম সেনা ছিল। তারা মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়েছে। এটাই আমাদের ভারতবর্ষ। আমাদের দেশের নাম উচ্চারিত হলে সংহতির কথাই আসে সবার আগে। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ভেদাভেদ করে কিছু মানুষ। তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।”

তিনি আরো বলেন, এদেশের প্রতিটি মানুষের নিজের ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে তার জন্য কাউকে জবাবদিহি করার প্রয়োজন নেই।

Related Articles

Back to top button
error: