দেশ

অন্যান্য রাজ্যে স্কুল খুললেও পশ্চিমবঙ্গে নয় কেন সোচ্চার একাধিক ছাত্র সংগঠন

ইব্রাহিম মণ্ডল, টিডিএন বাংলা, কলকাতা : পাঞ্জাব সরকার ইতিমধ্যেই ২ আগষ্ট স্কুল খোলার ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করেছে। হরিয়ানা ১৬ জুলাই থেকে শুরু করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষিত মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার, গুজরাতের সরকার যদি কোভিড বিধি মেনে স্কুল খুলতে পারে তাহলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন স্কুল খুলতে পারবে না। এ বিষয়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষক সংগঠন সরকারের কাছে স্কুল খোলার দাবি জানাতে শুরু করেছে। রাজ্য জুড়ে স্কুল খোলার দাবিতে অনলাইনেও অনেক শিক্ষক সংগঠন দাবি তুলেছেন।

স্কুল খোলার ব্যাপারে রাজ্যের অন্যতম ছাত্র সংগঠন এসএফআই(SFI) এর রাজ্য সভাপতি সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার আসলে স্কুল খোলার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তারা ‘বিধান পরিষদ’ ফিরিয়ে আনার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে প্রস্তুত আছে। অথচ স্কুলগুলো খোলার জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে মোটেও আগ্রহী নয়।” অনলাইন স্কুগুলির সঙ্গে সরকারের বা প্রশাসনের কোন অংশের যোগাযোগ আছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন। তিনি মনে করেন, ‘তাদের সুবিধা পাইয়ে দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে স্কুল খোলায় দেরি করা হচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, “শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছুই করছে বর্তমান সরকার।” তিনি অবিলম্বে স্কুল খোলার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।”

সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন এসআইও(SIO) এর পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি সাব্বির আহমেদ বলেন, ”রাজ্যে করোনা সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্যেও পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুল খুলে দিতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে সরকারকে অবশ্যই কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা ও বিধি-নিষেধ প্রণয়ন করে স্কুল-কলেজের দরজা খুলে দিতে হবে।”

এছাড়াও সর্বভারতীয় ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (ABVP) এর জাতীয় সম্পাদক সপ্তর্ষি সরকার টিডিএন বাংলাকে জানান, “বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল খোলার ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন স্কুল খোলার ব্যাপারে কোনো আলোচনা করছে না।” তিনি রাজ্য সরকারকে প্রশ্ন করেন, “সিনেমা হল, পার্ক, শপিংমল, যানবাহন সবই যখন চলছে তখন স্কুল কেন বন্ধ রাখা হয়েছে? তিনি অবিলম্বে রাজ্য সরকারের কাছে স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। সেই সাথে তিনি আরও বলেন, আমরা সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে স্কুল খোলার ব্যাপারে মেইল করে স্কুল কলেজ কলার জন্য আবেদন জানিয়েছি। একইসঙ্গে তিনি জানান, ‘ রাজ্যে স্কুল খোলা না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন।’

এই বিষয়ে ফ্রেটারনিটি মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়ার জেনারেল সেক্রেটারি আবু জাফর মোল্লা বলেন, “এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক যে পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত করোনা বিধি লংঘন করে ভোট হতে পারে, মদের দোকান খুলে দেওয়া যেতে পারে, পার্কগুলো খুলে দেওয়া যেতে পারে, সিনেমা হল খোলা যেতে পারে কিন্তু স্কুল খোলা যেতে পারে না।” তিনি অভিযোগ করেন, “রাজ্য সরকার উপ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। অথচ স্কুল খোলার ব্যাপারে তাদের কোনো আলোচনাই নেই।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, “রাজ্য সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, “কম বয়সী শিশু-কিশোরদের ইমিউনিটি পাওয়ার বেশি আছে।” রাষ্ট্রসংঘও স্কুল খোলার ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। তিনি অবিলম্বে ৫০% ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

একই সাথে স্কুল খুলে দেওয়ার দাবী জানালেন মাদ্রাসা স্টুডেন্টস ইউনিউনের প্রাক্তন সেক্রেটারি রকিব হক, তিনি জানান বিভিন্ন রাজ্যে যেহেতু কোভিড সচেতনতা মেনে স্কুল খুলছে, তাই আমাদের রাজ্যেও করোনার বিধিনিষেধ মেনে স্কুল গুলির সাথে হাইমাদ্রাসা গুলিও খুলে দেওয়া হোক। এই দাবী সময়ের দাবী তাই যতদ্রুত সম্ভভ রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে যেন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

উল্লেখ্য, সরকারি আদেশ অনুযায়ী ‎‎১৬ জুলাই‎‎ থেকে হরিয়ানার স্কুলগুলি পুনরায় খুলেছে, হরিয়ানার সিএমও তাদের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে এই ঘোষণা দেয়। বিহারের শিক্ষামন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন যে ১ম থেকে ১০ ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিক ক্লাস ‎‎আগস্ট ২০২১ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ‎‎থেকে পুনরায় শুরু হবে।‎ গুজরাট সরকার ‎‎২৬ জুলাই থেকে‎‎ ৫০ শতাংশ বসার ক্ষমতা সহ নবম থেকে ১১ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলগুলি শারীরিকভাবে পুনরায় খোলার অনুমতি দিয়েছে। “অফলাইন ক্লাসে, আমরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে আমাদের সন্দেহগুলি পরিষ্কার করতে সক্ষম।‎” বলে জানায় গুজরাট সরকার। ‎পাঞ্জাব সরকার গত শনিবার কোভিড-১৯ উপযুক্ত আচরণ নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ প্রোটোকলসহ ২ আগস্ট থেকে রাজ্যের সমস্ত ক্লাসের জন্য স্কুল পুনরায় খোলার ঘোষণা দিয়েছে।‎

দেশের অনেকগুলি রাজ্যে স্কুল খুলে গেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কবে খুলবে এই প্রশ্ন রাজ্যের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন গুলির। সেই সাথে কবে খুলবে স্কুলটা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা ছাত্র মহলে।

Related Articles

Back to top button
error: