দেশ

হাথরাস কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: হাথরাস কান্ডকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বাড়তে থাকা ক্ষোভের মুখে পড়ে শনিবার সকাল থেকেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রথমে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন স্বয়ং উত্তর প্রদেশে পুলিশের ডিজি এইচসি অবস্তি এবং রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অবিনাশ অবস্তি। এবার রাহুল গান্ধী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দপ্তর থেকে জানানো হলো,”মুখ্যমন্ত্রী যোগীজি সম্পূর্ণ হাথরাস কাণ্ডের তদন্ত সিবিআই-এর দ্বারা করানোর আদেশ দিয়েছেন।”

এরপর, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি টুইট করে জানানো হয়,”হাথরাসের দুর্ভাগ্য পূর্ণ ঘটনা এবং এর সাথে জড়িত সমস্ত বিষয়গুলির গভীরভাবে তদন্ত করানোর উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই ঘটনার তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান ব্যুরো (সিবিআইয়ের) মাধ্যমে করাতে চায়। এই ঘটনার জন্য দায়ী সমস্ত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য আমরা সংকল্পবদ্ধ।”

এদিন সকালে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উত্তর প্রদেশে পুলিশের ডিজি এইচসি অবস্তি এবং রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অবিনাশ অবস্তিপরিবারের সমস্যার কথা জানতে চান এবং তাদেরকে উত্তর প্রদেশে পুলিশের ওপর ভরসা রাখার কথা বলেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়, যে তারা পুলিশের ওপর ভরসা করেন না। পরিবারের পক্ষ থেকে সিবিআই তদন্তের দাবিও করা হয়। এরপর এই সমস্ত বিষয় যোগী আদিত্যনাথ কে জানান রাজ্যের এই দুই শীর্ষ আধিকারিক। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় যোগী সরকার।

উল্লেখ্য বিষয় হল, এদিন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যখন পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রায় সেই সময়েই যোগী সরকারের দপ্তর থেকে এই টুইটটি করা হয়। এদিন দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর উত্তর প্রদেশে পুলিশের বিশাল ঘেরাটোপ পেরিয়ে সন্ধের সময় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বন্ধ ঘরে পরিবারের সঙ্গে কথোপকথন করেন তারা। রাহুল গান্ধী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গেই ঘরে উপস্থিত ছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার পর নির্যাতিতার মাকে আলিঙ্গন করেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। জানতে চান তার যন্ত্রণার কথা। নির্যাতিতার বাড়ির বাইরে করা সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এদিন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর রাহুল গান্ধী জিজ্ঞাসা করেন তারা নেয় মিলবে বলে কি মনে করেন? এই প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিতার মা বলেন, আপনি আমাদের ন্যায় পাইয়ে দিন।

পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার পর গণমাধ্যমের সামনে এসে রাহুল গান্ধী বলেন,”আমরা এই দুঃখের সময় নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে রয়েছি। সরকার এদের ভয় দেখাচ্ছে, শাসাচ্ছে। এদের সুরক্ষা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। এদের সুরক্ষা দিতে উত্তরপ্রদেশ সরকার ফেল করেছে। এদেরকে শাসিয়ে কাগজের ওপর সই করানো হয়েছে।”

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন,”নির্যাতিতার পরিবার বিচারিক তদন্ত চায়। পরিবারের সদস্যরা মেয়ের মুখ পর্যন্ত দেখতে পাননি। নির্যাতিতার পরিবারকে ইনসাফ দেওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।”

অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন,”রাহুলজি বলেছেন যেকোনো ধরনের সহায়তা করার জন্য কংগ্রেস দল পাশে রয়েছে। পরিবার বেশ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছে। ডিএমও ভয় দেখিয়েছেন। পরিবার ডিএমএর বদলির দাবি করেছে।”

এদিন, অসংখ্য কংগ্রেস সমর্থকদের নিয়ে হাথরাসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কংগ্রেসের ৩৫ জন সাংসদের একটি প্রতিনিধি দল। যদিও তারা রওনা হওয়ার আগেই দিল্লি-নয়ডা ডাইরেক্ট ফ্লাইওয়েতে ভারী মাত্রায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ব্যারিকেড বসানো হয়। তিন সারিতে পুলিশের লম্বা অভেদ্য দুর্গ তৈরি করা হয়। যার প্রথম সারিতে পরস্পর পরস্পরের হাতের লাঠি ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। এমনকি, উত্তরপ্রদেশেরগৌতম বৌদ্ধ নগরে সিআরপিসি ১৪৪ ধারা লাগু করা হয়। সীমা সিল করা না হলেও চেক পয়েন্টগুলিতে বেশি মাত্রায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে এদিন বহুক্ষণ অপেক্ষা করার এবং বাক-বিতণ্ডার পর শেষ পর্যন্ত নয়ডা পুলিশ পাঁচজনকে হাথরাসের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার অনুমতি দেয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দিল্লিতে নিজের বাসভবন থেকে রওনা হন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দিল্লি থেকে নয়ডা পৌঁছানোর পরেই তাদের গাড়ি আটকে দেয় পুলিশ। এরপর পায়ে হেঁটেই হাথরাসের দিকে রওনা হন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। কিছু দূর অগ্রসর হবার পর ফের তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এক পুলিশকর্মী রাহুল গান্ধীকে ধাক্কাও দেন। যার জেরে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এরপর রাহুল গান্ধীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের গাড়ি করে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে যাওয়া হয়।জানা গেছে, গ্রেফতার করার আগে পুলিশের সাথে রাহুল গান্ধীর বচসা হয়।রাহুল গান্ধী জিজ্ঞাসা করেন তাকে কোন ধারায় গ্রেফতার করা হচ্ছে? একা যাওয়া কিভাবে ১৪৪ ধারার উলংঘন করা হয়? এই প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মীরা তাকে জানান ধারা ১৮৮-র আওতায় তাকে আটক করা হচ্ছে।

Related Articles

Back to top button
error: