টানা বর্ষায় ফের জলমগ্ন সুন্দরবনে গৃহহীন বহু মানুষ, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিনিধি, টিডিএন বাংলা, গোসাবা: গত চার দিন টানা বৃষ্টিপাতের ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। পাঠানখালী, শম্ভুনগর ও চন্ডিপুর এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত দ্বীপ অঞ্চলটি সহ আশেপাশের মোল্লাখালী কুমিরমারী কচুখালী প্রায় সব জায়গায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাতের এতটাই প্রভাব ছিল যে জলের তোড়ে ভেঙে পড়েছে বহু ঘর বাড়ী, জলমগ্ন হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট, বাজার এলাকা। গৃহহীন হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ফ্লাড সেন্টারে, কেউবা চলে গিয়েছে কোন আত্মীয় পরিজনের বাড়ি।
জল এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে মাঝে মাঝে কিছু গাছপালা ও বাড়িঘরের মাথা বাদে প্রায় সবকিছুই অদৃশ্য হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু জল আর জল। জল দেখলে মনে হবে যেন কোন সমুদ্রে বয়ে গেছে আপন ধারায়। জলের তোড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় অনেকেই তারা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র সহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র হারিয়েছেন। ভেসে গেছে ব্যবহার্য আসবাবপত্র। প্রচুর গবাদি পশুও মারা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন এলাকাবাসীরা।
এই প্রতিনিধি পাঠানখালী গিয়ে দেখেন সেখানকার এক বাসিন্দা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম এই দুর্যোগের মধ্যেও জলমগ্ন ঘরের দাওয়ায় একটি তক্তপোষে বসে ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি জানালেন, এলাকার খাল -বিল বৃষ্টিপাতে অদৃশ্য হয়ে গেছে। ফলে টানা এই বৃষ্টিপাত এতটাই ভয়ানক যে মাছ চাষীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্ষাকালের সময় যেখানে বৃষ্টির জল হাঁটুর নিচে থাকার কথা ছিল সেখানে গলা পর্যন্ত উঠে যাওয়ায় ধান চাষেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির জলে বীজতলা ডুবে যাওয়ায় তা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে কৃষক থেকে শুরু করে মৎস্যচাষী, গবাদিপশু ব্যবসায়ীরা তারা তাদের উপার্জন হারানোয় তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
ভাটার সময় স্থানীয়রা জমা জল নদীতে বের করে দিলেও বৃষ্টির পরিমাণ এতটাই বেশি যে জল কমার পরিবর্তে ক্রমশই তা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনে অনেক বার যশ, বুলবুল, আয়লা, আম্ফান ইত্যাদির মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলেও বৃষ্টিপাতের জল এতটা পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া এই প্রথম দেখলেন বলে জানাচ্ছেন সুন্দরবনবাসীরা।