দেশ

ভারতবর্ষকে মা বোনদের জন্য নিরাপদ জোন তৈরির আহ্বান মুসলিম নেতাদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা, কোলকাতা: ভারতবর্ষকে মা বোনদের জন্য নিরাপদ জোন তৈরির আহ্বান জানালেন মুসলিম নেতারা। উত্তরপ্রদেশে একেরপর এক দলিত নারী ধর্ষণ ও হাথরসের ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনের মধ্যেই মুসলিম নেতারা বলছেন, ধর্ষণের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। তাদের মতে, ধর্ষণ একটা পাপ কাজ। আধুনিক যুগে নারীদের উপর এই বর্বর আক্রমণ দেখে মানুষ লজ্জিত।
কলকাতার নাখোদা মসজিদের ইমামও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মাওলানা শফিক কাসেমী দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুর রফিক বলেন,’
হাথরসের ধর্ষণের ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক ও লজ্জার। এই মুহূর্তে সারা দেশজুড়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে উত্তাল গণআন্দোলন দরকার। এমন আইন দরকার যেখানে কেউ নারীদের উপর নোংরা চোখ তুলে তাকাবে না। আন্দোলন এমন হওয়া উচিত যাতে পুলিশ, প্রশাসন অপরাধীদের ছেড়ে না দেয়। আমাদের ভারতবর্ষকে আমাদের মা বোনদের জন্য সেফ জোন তৈরি করতে দাবি। এমন একটা সমাজ গড়তে হবে যেখানে ধর্ষণ দূরে থাক, পথে ঘাটে দিনে রাতে নারী একাকিনী যাবে কেউ কটূ কথা পর্যন্ত বলবে না।”
জমিয়তে আহলে হাদিসের রাজ্য সম্পাদক আলমগীর সরদার বলেন,”যেকোনো ধর্ষণই ভয়াবহ অপরাধ। ধর্ষকদের চূড়ান্ত সাজা হওয়া উচিত। ধর্ষণ অর্থ জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া। উত্তরপ্রদেশের হাথরসে যে ধর্ষণ হয়েছে তা শুধু জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া নয়, পরিকল্পিত গ্যাং রেপ। শুধু গ্যাংরেপ বললেও কম বলা হয়। এই গ্যাংরেপ পশুপ্রবৃত্তিকে হার মানিয়েছে। মেয়েটিকে ঘাড় মটকে, কোমর ভেঙে, জিভ কেটে যে পাশবিক অত্যাচার এই নরপিশাচরা করেছে তার জন্য তাদের চূড়ান্ত সাজার দাবি করছি। এই সংঘটিত অপরাধের সাথে সাথে সে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের আচরণ হতবাক করে দিয়েছে। প্রথমত অজ্ঞাত কারণে হাসপাতাল পরিবর্তন করা, মৃত্যুর পরে তার লাশকে পরিবারের হাতে তুলে না দেওয়া, রাতের অন্ধকারে ধর্মীয় রীতি নীতি না মেনে তার লাশ কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, তার পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা লিখে নেওয়া, ধর্ষণ হয়নি বলে মন্তব্য করা, এলাকাতে মিডিয়াকে ঢুকতে না দেওয়া, বিরোধী দলকে সেখানে পৌঁছতে না দেওয়া, এসব কিছুই করা হয়েছে ধর্ষকদের আড়াল করার জন্য। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এসব গুলো করা হয়েছে সরকার উলঙ্গ হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আমরা চাই গোটা ঘটনার পিছনে যারা যারা দায়ী তাদের যথোপযুক্ত সাজা হোক।”
সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি ড: নুরুল ইসলাম জানান,
“আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে এক ভয়ানক অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশের আইনের শাসন দূর্বল থেকে দূর্বলতর হচ্ছে। মোদী সরকার যে রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন, তা যে কত অন্তঃসারশূন্য তা মানুষ এখন উপলব্ধি করতে পারছে। এতদিন ধরে মব লিন্চিং এর শিকার হচ্ছে মুসলিমরা, তার যথাযথ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ হচ্ছে না। এখন শুরু হয়েছে গ্যাঙরেপ বা পাইকারি ধর্ষণ। এই মানবতা বিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছে দলিত মহিলারা। উভয় ক্ষেত্রে অপরাধীরা অভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মানুষ।
এই অপরাধের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ও নেতৃত্বের সম্পর্ক সুষ্পষ্ট। অপরাধীরা দূর্বার ও দূর্বিনীত হয়ে গেছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া ছাড়া এই নৈরাজ্য থেকে মুক্তির কোনো বিকল্প পথ নেই। এতদিন যাদের শেখানো হয়েছে যে তথাকথিত বৃহত্তর হিন্দু জনগোষ্ঠীর ‘কমন এনিমি’ মুসলিম সম্প্রদায়, তাদের এখন অন্তর্দৃষ্টি খুলে যাওয়ার কথা। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে পরস্পর সংঘটিত ধর্ষণ ও হত্যার তীব্র নিন্দা করছি এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”

যাদবপুর ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আব্দুল মতিনের মন্তব্য,’হাথরসে দলিত মহিলার উপর এই পাশবিক আক্রমণ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সমাজের মধ্যে হিংস্র জাতি ব্যবস্থারই অংশ। এনসিআরবি তথ্য থেকে পরিস্কার কিভাবে জাতি ব্যবস্থা ও ক্রিমিনাল হিংসা আমাদের সমাজে শেকড় পুঁতে আছে। দেশে প্রতিনিয়ত আদিবাসী, দলিত ও মুসলিম মহিলাদের সঙ্গে ঘটে চলেছে এই অত্যাচার। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জাতি প্রথার বিরুদ্ধে গর্জে না উঠতে পারলে এই ঘটনা ঘটেই চলবে। এই ধরনের অত্যাচারে দলিত,আদিবাসী, মুসলিম মহিলারা বেশি আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীর বেটি বাঁচাও শুধু মাত্র কি জুমলাবাজি?”
আল আমীন মাইনোরিটি কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল হকের মন্তব্য,”যোগীর রাজ্য অপরাধের নিরীখে দেশে এক নম্বর। নারী ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা উত্তরপ্রদেশে পর পর ঘটে চলেছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলিত মহিলাদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে । আর যারা এই জগন্য অপরাধগুলো করে চলেছে তারা হয় সরাসরি বিজেপির নেতা মন্ত্রী, নতুবা সরকার আশ্রিত বা মদদপুষ্ট।
হাথরাসে একটি উনিশ বছরের মহিলাকে শুধু ধর্ষণ করা হলনা তার জিভ কেটে নেওয়া হল, গুরুতরভাবে আহত করা হল যাতে দোষীদের কথা বলতে না পারে। কিন্তু তারপরও, জবানবন্দীতে মেয়েটি যার নাম করেছিল, অভিযোগ সেই লোকটির বাবার সাথে যোগীর প্রত্যক্ষ ঘনিষ্ঠতা আছে। প্রসাশন, ডি এম সকলে তাই নির্লজ্জের মতো অপরাধীদের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটির দেহ কেরোসিন জাতীয় কিছু দিয়ে পুড়িয়ে রাতের অন্ধকারে প্রমাণ লোপাটের কাজ করেছে।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নীরব, রাজ্য সরকার একটা প্রহসনের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আসলে বিচার বলে আর কিছু নেই। এরকম কত নির্ভয়াকে এই পিশাচদের লালসার শিকার হতে হবে জানিনা। আইন আদালত করে করে অসহায় দলিত,নিরীহ শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষগুলো এভাবে শেষ হয়ে যাবে যদি না সকলে অবিলম্বে একজোট হয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সহ যোগী আদিত্যনাথের মতো ভন্ডদের ক্ষমতার শিখর থেকে নামানো না হয়। শুধু পদত্যাগের দাবী করে কিচ্ছু হবে না। এরা নির্লজ্জ, অসভ্যের দল।”

Related Articles

Back to top button
error: