৭২০ তে ৭২০ নম্বর পেয়ে এনআইআইটি ২০২০ পরীক্ষায় ইতিহাস গড়েছেন ওড়িশার শোয়েব আফতাব
টিডিএন বাংলা ডেস্ক: দেশে প্রথম বার সর্বভারতীয় মেডিকেল এন্ট্রান্সের পরীক্ষা অর্থাৎ এনআইআইটির মত উচ্চস্তরের পরীক্ষায় সাতশ কুড়িতে একেবারে সাতশ কুড়ি পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ওড়িশার শোয়েব আফতাব। এর আগে এমন নম্বর কেউ পায়নি। এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ওড়িশার রৌঢ়কেলার ১৮ বছর বয়সী শোয়েব আফতাব।
এদিন ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির পক্ষ থেকে ফাইনাল রেজাল্ট প্রকাশের আগেই প্রকাশিত ওএমআর শিট এবং আনসার কি দেখে একরকম নিজের ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেছিলেন শোয়েব। কোটায় যে ইনস্টিটিউট থেকে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন সেই অ্যালেন কেরিয়ার ইনস্টিটিউট এর পক্ষ থেকে ফাইনাল রেজাল্ট প্রকাশের আগেই শোয়েবকে নিট পরীক্ষায় দেশের প্রথম স্থানাধিকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়। একটি টুইট করে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে লেখা হয়, “আমরা খুবই গর্বের সাথে ঘোষণা করছি যে এন্টি এর প্রকাশিত ওএমআর শিট এবং রেকর্ড রেসপন্স রিলিজের তথ্য অনুযায়ী আমাদের দু’বছরের ক্লাসরুম কোর্সের ছাত্র শোয়েব আফতাব নিট ২০২০ তে ৭২০/৭২০ নম্বর পেয়েছে। আবারো ইতিহাস তৈরি করল এক এবং অদ্বিতীয় অ্যালেন ছাত্র।”
ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির পক্ষ থেকে এনআইআইটি ইউজি ২০২০ ‘আনসার কি’ প্রকাশ করা হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ‘ওএমআর শিট’ প্রকাশ করা হয়েছিল ৫ অক্টোবর। এরপর আজ, ১৬ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী ঘোষণা করা হয় চূড়ান্ত ফলাফল। ফলাফল প্রকাশ হতে দেখা যায়, সত্যিই ওড়িশার ১৮ বছরের শোয়েব আফতাব সাতশ কুড়িতে সাতশ কুড়ি ইতিহাস গড়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালে এই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ছিলেন রাজস্থানের নলিন খান্ডেলওয়াল। তিনি ৭২০/৭০১ নম্বর পেয়েছিলেন।
নিজের এই সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে শোয়েব জানিয়েছেন তার পরিবারে তিনিই প্রথম যিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন। একজন ছাত্র হিসেবে শোয়েব কোনদিনই অসামান্য উচ্চ মেধার ছাত্র ছিলেন না। এমনকি তার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলে ও অসামান্য উচ্চ মেধার পরিচয় দেননি তিনি। তবে ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। যখন তিনি ক্লাস এইটে পড়তেন তখন তার বাবা একজন চায়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। সেসময় কোটার মতন জায়গায় গিয়ে কোন কোচিং ইনস্টিটিউটে পড়াবা ভালো কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারা এক রকম অসম্ভব মনে হতো তাঁর। যদিও পরবর্তীকালে বাবার ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিবর্তন এবং উন্নতির জন্য তিনি পৌঁছে যান কোটার অ্যালেন ইনস্টিটিউটে। এরপর আমূল পরিবর্তন হয় তার ফলাফলে।
শোয়েব জানিয়েছেন স্কুল এবং বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পড়ার পাশাপাশি তিনি সারা দিনে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় পেতেন সেল্ফ স্টাডি করার জন্য। তার দিন শুরু হতো সকাল ছটায় আর শেষ হতো সন্ধে সাতটায়। কিন্তু শুধু মাত্র এই টুকু সময় সেল্ফ স্টাডি করতে পেরে সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি। তাই শনিবার এবং রবিবার দিনে লাগাতার ১৩ থেকে ১৪ ঘন্টা পড়াশোনা করতেন তিনি।
নিজের ভবিষ্যৎ জীবন প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে শোয়েব জানাননিজের এই সাফল্যে তিনি খুবই খুশি এবং এই সাফল্যের সমস্ত কৃতিত্ব তিনি তার মাকে দিতে চান, যিনি তার পাশে সব সময় থেকেছেন এবং নিঃশর্তভাবে সমর্থন করে গেছেন। ভবিষ্যতে দিল্লির এইমস হাসপাতালে ভর্তি হতে চান তিনি।
এদিকে, শোয়েবের এই সাফল্যে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠেছে শুভেচ্ছা বার্তায়। অনেকেই মনে করছেন শোয়েবের এই সাফল্য ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। প্রসঙ্গত, সাচার কমিটি এবং রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের রিপোর্ট সহ একাধিক সরকারি সংস্থার বিভিন্ন রিপোর্টে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কথা প্রকাশিত হয়েছে। সেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে শোয়েব আফতাবের এই সাফল্য আরো অগণিত মুসলিম ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্নের সাফল্যের দিকে অগ্রসর করতে অনুপ্রেরণা যোগাবে বলেই মনে করছেন নেটাগরিকরা।
এবছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ১৪.৩৭ লক্ষের বেশি পড়ুয়া এনআইআইটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। কয়েকদিন আগেই টুইট করে ১৬ তারিখ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার কথা জানান কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী রমেশ পখরিওয়াল নিশাঙ্ক। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য আয়োজন করা হবে এমবিবিএস ও বিডিএস এর অল ইন্ডিয়া কোটায় অনলাইন কাউন্সেলিং। সমস্ত পরীক্ষার্থীরা নিজেদের ফলাফল জানতে পারবেন
nta.ac.in, ntaneet.nic.in ওয়েবসাইটে। এমবিবিএস ও বিডিএসে সুযোগ পেতে গেলে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে নিট পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। সংরক্ষিত ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ এবং শারীরিক অসুবিধা সম্পন্ন অনুবাদের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ নম্বর পাওয়া বাধ্যতামূলক। এবছর প্রথমবার সরকার এমবিবিএস, বিডিএসে ভর্তির ক্ষেত্রে জঙ্গি হামলার শিকার পরিবারগুলির সদস্যদেরও কোটার ব্যবস্থা করেছে। যাঁরা সন্ত্রাসদমনে যুক্ত বা, জঙ্গি গোষ্ঠীর হিট লিস্টে যাঁরা রয়েছেন কিম্বা অশান্ত পরিস্থিতির জেরে কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা সবাই এই কোটার সুযোগ পাবেন।