দেশ

কৃষকরা মোদি সরকারের ওপর বিন্দুমাত্র ভরসা করেন না; কৃষিবিল নিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে ফের মোদিকে কটাক্ষ করলেন রাহুল

নিজস্ব সংবাদদাতা,টিডিএন বাংলা ডেস্ক: সদ্য সংসদে পাস হওয়া বিতর্কিত কৃষি বিল এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই সারা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ আন্দোলন। গতকাল পাঞ্জাবের কৃষক সমিতিগুলির “রেল রোকো” আন্দোলনের হাত ধরে আজ সারা ভারতে বন্ধের ডাক দিয়েছে সমস্ত কৃষক সংগঠনগুলি। এই পরিস্থিতিতে কৃষি বিল নিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা এবং উদ্বেগ সম্পর্কে সরাসরি তাঁদের সাথেই কথা বললেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী। একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাহুল গান্ধী দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে বার্তালাপের ভিডিও ট্যাগ করে একটি টুইট করে লেখেন,”কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এটা স্পষ্ট যে তারা মোদি সরকারের ওপর বিন্দুমাত্র ভরসা করেন না।”

কৃষি আইনের বিরোধিতা করে রাহুল গান্ধী আরো লেখেন,”কৃষক ভাইদের জোরদার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে আমাদের সবার আওয়াজ মিলিত হয়েছে এবং আজ পুরো দেশ একসাথে এই আইনের বিরোধিতা করছে।”

নিজের টুইটার সাথে যে ভিডিওটি রাহুল গান্ধী পোস্ট করেছেন সেখানে দেখা যাচ্ছে বিহার, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার বিভিন্ন কৃষকরা কৃষি বিল নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কখনো এমএসপি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা তো কখনো সমস্ত নিয়ন্ত্রণ আম্বানি আদানিদের মত পুঁজিপতিদের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। বিহারের চম্পারনের কৃষক ধীরেন্দ্র কুমার জানিয়েছেন,”এই আইন সম্পূর্ণভাবে অন্ধ আইন। এখানে গরিবদের শোষণ করা হচ্ছে।” অপরদিকে, হরিয়ানার কৃষক রাকেশ জাখর বলেছেন,”এই আইনে যদি সত্যিই কৃষকদের ভালো হওয়ার হয় তাহলে এমএসপি নিয়ে কেন কোন আইন তৈরি করা হয়নি?” এ প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী কৃষকদের প্রশ্ন করেন, এমএসপি নিয়ে কেন তারা ভয় পাচ্ছেন? এর জবাবে হরিয়ানার এক প্রৌঢ় কৃষক ওম প্রকাশ ধনখড় বলেছেন,”যদি এঁরা (সরকার) এমএসপির কোন গ্যারান্টি দিয়ে দেন, যেমন যদি কোন এজেন্সি বা কোন কৃষক এমএসপির নিচে কেনাবেচা করেন তাহলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ মানা হবে। এমএসপির নিচে কোনরকম কেনাবেচা হওয়াই উচিত নয়।” এই একই প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্রের এক কৃষক পঙ্কজ তনিরাম মটেরে বলেছেন,”আমাদের সমস্ত উৎপাদন একাধিক কোম্পানি নিয়ে যাওয়ার পর তারা যদি পয়সা না দেন তাহলে আমরা রিলায়েন্স কোম্পানির লোকেদের বাড়িতে গিয়ে তো কান্নাকাটি করতে পারব না, তারা তো আমাদের লাঠি মেরে তাড়িয়ে দেবেন। আমরা তো তাহলে মারা পড়বো। কি খাব আমরা? কি করবো আমরা তখন?”

পুঁজিপতিদের হাতে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করা নিয়ে নিজেদের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে মহারাষ্ট্রের এক প্রৌঢ় কৃষক অশোক বুতরা বলেছেন,”কর্পোরেট জগতের লোকেরা কৃষকদের কাছ থেকে তাদের ফসল কিনে দুগুণ, তিনগুণ দামে বিক্রি করতে পারবেন। ঠিক যেমনভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের ব্যবসা চালাত।”এ প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী তাঁকে প্রশ্ন করেন তাহলে কি আপনি বলতে চাইছেন, “আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল আর এখন ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আছে?”এই প্রশ্নের জবাবে সহমতি জানান ওই কৃষক। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রসঙ্গ উত্থাপন হওয়ার পর রাহুল গান্ধী বলেন, কৃষকদের আওয়াজ ভারতের সেনা, যুবসমাজ, পুলিশ সর্বত্র রয়েছে। একসময় ভারত যখন ইংরেজদের হাতে পরাধীন ছিল সে সময় কৃষকদের জোরালো প্রতিবাদের হাত ধরেই ভারত স্বাধীন হয়েছিল। আবারো কৃষকদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের জোরেই ভারত স্বাধীন হবে।

Related Articles

Back to top button
error: