দেশ

দুনিয়াতে এমন কোনো শক্তি নেই যা ভারতীয় সেনাকে টহলদারি করতে বাধা দিতে পারে; ভারত চিন সীমান্ত বিবাদ প্রসঙ্গে জানালেন রাজনাথ সিং‍

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: ভারত চিন সীমা বিবাদ প্রসঙ্গে লোকসভার পরে রাজ্যসভাতেও নিজের বিবৃতি দিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। রাজনাথ সিং এদিন রাজ্যসভায় বলেন চিনের বলা আর কাজ করার মধ্যে অনেক ফারাক রয়েছে, কিন্তু ভারত যে কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত। দুনিয়াতে এমন কোনো শক্তি নেই যা ভারতীয় সেনাকে টহলদারি করতে বাধা দিতে পারে। চীনের পদক্ষেপের জন্য গালওয়ান ঘাঁটিতে বিবাদের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

রাজনাথ সিং বলেন,”চিন কেন্দ্র শাসিত রাজ্য লাদাখে প্রায় ৩৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার জমি অধিকার করে রেখেছে। চিন এখনো অরুণাচল প্রদেশে ভারত চিন সীমান্তের পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৯০,০০০ বর্গকিলোমিটার ভারতীয় অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে।”তিনি আরো বলেন,”ভারত এবং চীন এই দুই দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়টি স্বীকার করে যে সীমান্ত বিবাদ একটি অত্যন্ত জটিল বিষয় যা সমাধানের জন্য শান্তি প্রয়োজন। এই বিবাদের সমাধান শান্তিপূর্ণ আলোচনার দ্বারা করা উচিত। আমরা চিনকে ডিপ্লোম্যাটিক এবং সেনা স্তরে এটা জানিয়ে দিয়েছি যে এই ধরনের গতিবিধি, পরিস্থিতিকে একতরফা বদলানোর প্রয়াস। এটাও স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে যে এ ধরনের প্রয়াস আমরা কোনভাবেই মেনে নেব না।”

রাজনাথ সিং আরো বলেন,”চীন মনে করে যে সীমান্ত এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারিত নয়। ওদের মত অনুযায়ী ঐতিহাসিক জুরিসডিকশন এর ভিত্তিতে যে ঐতিহ্যবাহী রুপরেখা রয়েছে তা নিয়ে দু’দেশের আলাদা আলাদা মত রয়েছে। ১৯৫০-৬০ এর দশকে এই নিয়ে আলোচনা হয় তবে কোনো সমাধান বের হয়নি।”

এরপরে ভারতের জওয়ানদের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়ে রাজনাথ সিং আরো বলেন,”আমি সদন এর কাছে অনুরোধ করছি যে আমাদের বীর জওয়ানদের বীরত্ব এবং বাহাদুরির প্রশংসা করা উচিত। আমাদের বাহাদুর জওয়ানরা প্রচন্ড মুশকিল পরিস্থিতিতে নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সমস্ত দেশবাসীকে সুরক্ষিত রাখছেন। আমি দেশবাসীকে আসাস দিতে চাই যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি এবং সাহস অদম্য। আমাদের সেনা যেকোনো সংকটের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই সদন থেকে দেওয়া একতা এবং সম্পূর্ণ বিশ্বাসের বার্তা সম্পূর্ণ বিশ্বে অনুরণিত হবে। এবং আমাদের সেনা, যারা চীন সেনার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে অবিচলিতভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাঁদের মধ্যে নতুন মনোবল, শক্তি এবং উৎসাহের সঞ্চার হবে।”

প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরো বলেন,”বিগত কয়েক দশক ধরে চিন বড় আকারে অবকাঠামো তৈরি করার কাজ শুরু করেছে। যার ফলে সীমান্ত অঞ্চলে তাদের কূটনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়েছে। এর জবাবে আমাদের সরকার ও সীমান্ত অঞ্চলে অবকাঠামো মূলক বিকাশের জন্য বাজেট বাড়িয়েছে, যা আগের থেকে প্রায় দু গুণ বেশি।”

এর আগে রাজনাথ সিং লোকসভায় বলেছিলেন,”বর্তমান পরিস্থিতি অনুসারে, চীনা সেনাবাহিনী এলএসি-তে প্রচুর সেনা ও অস্ত্র মোতায়েন করেছে এবং এই অঞ্চলে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের অনেক বিষয় রয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের সেনাও জবাবে মজুত রয়েছে যাতে দেশের সুরক্ষা স্বার্থের পুরোপুরি যত্ন নেওয়া হয়। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দৃঢ়ভাবে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে গর্বিত।”

এরপর সংসদ এবং সারা দেশের মানুষের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে থাকার প্রস্তাব পাশ করানোর কথা বলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, ভারত চীনের সঙ্গে সীমান্তে অচলাবস্থার বিষয়টি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধান করতে প্রতিবদ্ধ। রাজনাথ সিং বলেন,”আমি এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে চাই যে ভারত শান্তিপূর্ণ কথোপকথন এবং পরামর্শের মাধ্যমে সীমান্তের সমস্যা সমাধান করতে প্রতিবন্ধ। এই প্রসঙ্গে আমি ৪ সেপ্টেম্বর চিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছি।” “আমি স্পষ্ট করে বলেছি যে আমরা এই বিষয়টিকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায় এবং এবং চীন আমাদের সাথে মিলিত ভাবে কাজ করুক।”এর পাশাপাশি রাজনাথ সিং এপ্রিলের পরে পূর্ব লাদাখে চীন সেনার অচলাবস্থার পরিস্থিতি এবং সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে কূটনৈতিক এবং সেনাস্তরে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ গুলি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন,সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লাদাখ সফরের সময় এই বার্তা দিয়েছিলেন যে সমস্ত দেশবাসী সৈন্যদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর লাদাখ সফরের কথা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমিও সৈন্যদের অদম্য সাহস ও বীরত্ব অনুভব করেছি।” তবে, ভারত ও চীনের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের প্রশ্নটি এখনও নিষ্পত্তিহীন এবং উভয় পক্ষই বিশ্বাস করে যে সীমান্ত একটি জটিল বিষয় এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সন্ধান করা উচিত বলে মন্তব্য করেন রাজনাথ সিং।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন,ভারত বিশ্বাস করে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়ানো যেতে পারে এবং সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, তবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) লঙ্ঘনের ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়বে। রাজা সিংহ বলেন, চুক্তি অনুযায়ী সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা সম্পূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লংঘন কোন অবস্থাতেই করা যাবে না।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন যে দু’দেশ এই মূল নীতিগুলির সাথে একমত হয়েছে যে উভয় পক্ষেরই অবশ্যই এলএসি’র সম্মান করা উচিত এবং কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে, উভয় পক্ষেরই স্থিতাবস্থা লঙ্ঘনের চেষ্টা করা উচিত নয় এবং উভয় পক্ষকেই সমস্ত চুক্তি মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও সশস্ত্রবাহিনীর সীমান্তে পাহারাদারি এবং প্রচেষ্টার সম্মান করা উচিত।

Related Articles

Back to top button
error: