দেশ

উচ্চবর্ণের নির্দেশ অমান্যর জের! গ্রামছাড়া ৪০টি দলিত পরিবার

টিডিএন বাংলা ডেস্ক : তাদের ‘অপরাধ’ উচ্চবর্ণের নির্দেশ অমান্য করা। যার জেরে গ্রামছাড়া ৪০টি দলিত পরিবার। ভিটে মাটি ছেড়ে ২০কিমি দূরে পুরির নাথপুর গ্রামে এখন কোনও রকমে মাথা গুজেছেন অসহায় ওই পরিবারগুলি।

আধুনিকতা, শিক্ষা এগুলো এখনও হয়তো কথার কথা। এখনও জাতপাতের নামে চলে নির্যাতন। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও এখনও উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের মধ্যে ফারাক। চিলকা হ্রদের মধ্যে ছোট্ট একটা দ্বীপ। সেখানেই বাস করতো ৪০টি দলিত পরিবার। গ্রামের নাম ব্রহ্মপুর। এখন অবশ্য ওই পরিবারগুলোর ঠাঁই হয়েছে নাথপুর গ্রামে এক ফালি পতিত জমির ওপর। কিন্তু কী এমন ঘটল, যে তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে হল? স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে উচ্চবর্ণরা একটি নির্দেশ দেয়। নির্দেশ ছিল, তাদের পরিবারের এক ছেলের বিয়েতে দলিতদের পাল্কি তুলতে হবে। পরিবর্তে তাদের বিয়ে বাড়িতে খাওয়ানো হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ মানতে চায়নি দলিত পরিবারগুলো। দলিত হয়ে এতো বড়ো স্পর্ধা! উচ্চবর্ণের নির্দেশ অমান্য করা! মানতে পারেনি দলিতদের সেই ‘মন কী বাত’। ‘প্রতিশোধ’ তো নিতেই হবে।

বছর ৩৩ এর সংগ্রাম ভোই জানান, ”পাল্কি বহন করতে রাজি না হওয়ায় চিল্কাতে আমাদের মাছ ধরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পেশায় আমরা মৎসজীবী। মাছ ধরা বন্ধ হতেই আর্থিক সমস্যায় পড়েছি। সেই সময় থেকেই আমাদের পরিবারগুলি গ্রাম ছাড়তে শুরু করে। গ্রামের যুবকরা চাকরির খোঁজে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু ও অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাকিরা দিনমজুর হিসাবে অন্যান্য গ্রামে যায় কাজ করতে।”

ঘটনা হল, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বছরের এক দলিত যুবক উচ্চবর্ণের গ্রামে মিষ্টি কিনতে যায়। সেখানে সে মদ্যপ অবস্থায় গণ্ডগোল করে বলে অভিযোগ। তারপর থেকেই দলিতদের গ্রামে ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গ্রামের রেশন দোকান দলিতদের জিনিসপত্র বিক্রি করত না। পানীয় জলের কুয়ো ও জলাশয় থেকে জল নিতে বাধা দেওয়া হতো। এমনকী নৌকায় উঠাতেও ছিল বাধা। সংগ্রাম আরও জানায়, ”উচ্চবর্ণরা বলেছিল একটি শর্তে তারা আমাদের গ্রামে পা রাখতে দেবে। আমাদের পাল্কি বইতে হবে। কিন্তু এরজন্য কোনও মজুরি দেওয়া হবে না। কিন্তু এখন আমাদের পরিবারের অনেকেই লেখাপড়া শিখেছে। পুরোনো রীতি তারা মানতে নারাজ।”
যদিও দলিতদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ উচ্চবর্ণ। উচ্চবর্ণের জনক জেনা নামে এক সদস্যর কথায়, ”অভিযোগ একেবারেই সত্যি নয়। দলিতরাই তাদেরকে এলাকায় প্রবেশে বাধা দেয়। কিন্তু আমাদের কাছে আশা করে যাতে তারা চিল্কাতে অবাধে মাছ ধরতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য আমাদের জমি কেড়ে নেওয়া।”

Related Articles

Back to top button
error: