দেশ

লকডাউনের ফলে মাত্র চার মাসে চাকরি খুইয়েছেন ৬০ লক্ষ্যের বেশি উচ্চ পদস্থ কর্মী!

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: লকডাউনের কোপে চাকরি হারিয়েছেন বহু মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন। কাজ হারিয়েছেন বহু শ্রমিক। তবে এই লকডাউন এর প্রভাব শুধুমাত্র শ্রমিকশ্রেণীর ওপরে সীমাবদ্ধ নেই। লকডাউনের কবে পড়ে মাত্র চার মাসে চাকরি খুইয়েছেন ৬০ লক্ষেরও বেশি উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত তৈরি করার রিপোর্টে এমনই তথ্য উঠে এসেছে।

করোনা সংক্রমণের গতি অবরোধ করতে মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার জেরে এক ঝটকায় থমকে যায় দেশ। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতে। তলানিতে পোঁছে যায় অর্থনীতির সূচক। হাজাগা হাজার প্রবাসী শ্রমিক কাজ ছেড়ে ফিরে এসেছেন বটে কিন্তু নতুন কাজ নেই। আর এই দুর্দশার শিকার শুধু শ্রমিকরা নন প্রভাব পড়েছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক একাউন্টেন্টদের মত হোয়াইট কলার কর্মচারীদের জীবনেও।

সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির রিপোর্ট অনুযায়ী,জানুয়ারি-এপ্রিল ২০১৬-তে দেশে উচ্চপদস্থ চাকুরিজীবীর সংখ্যা ছিল ১.২৫ কোটি। সেই পরিসংখ্যান ২০১৯ সালের মে-অগস্ট মাসে গিয়ে হয়েছিল ১.৮৮ কোটি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই সংখ্যা ছিল ১.৮৭ কোটি। এরপর জানুয়ারি-এপ্রিল মাসে এই পরিসংখ্যান কমে হয় ১.৮১ কোটি। তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ হল ২০২০ সালের মে-আগস্ট মাসে অর্থাৎ এই চার মাসে বিভিন্ন পেশার উচ্চপদস্থ কর্মীর সংখ্যা কমে হয়েছে ১.২২ কোটি। যার মানে হল, করোনার সংক্রমণ রুখতে জারি করা লকডাউনের জেরে প্রায় ৬০ লক্ষ কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন।ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে,গত বছরের একই সময়কালের তুলনায় প্রায় ৬৬ লক্ষ চাকরি কমেছে। এই পরিসংখ্যানে শুধুমাত্র যাঁরা কোনও সংস্থায় চাকরি করতেন তাঁরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মহেশ বলেছেন, ২০১৬-র পর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা এত কম হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, মে থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে এই সমীক্ষা করা হয়েছে। তবে জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস ধরলে এখনো পর্যন্ত কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৬৬ লক্ষ কর্মচারী। অর্থাৎ প্রায় প্রতিদিন ৫০ হাজার করে কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে।এক বছরের হিসেবে সবথেকে বেশি পেশাদারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারীরা কাজ হারিয়েছেন এইসময় মধ্যে। এর সাথেই শিল্প শ্রমিকরা যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ। গত বছরের তুলনায় শিল্প শ্রমিকদের পরিসংখ্যান কমে হয়েছে ২৬ শতাংশ। এককথায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ক্ষেত্র সবথেকে বেশি বিপদগ্রস্ত।

সমীক্ষকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার একাউন্টেন্টের মত হোয়াইট কলার কর্মচারীদের তুলনায় বিপিও বা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর কোন চাকরি খুইয়েছেন। যদিও ২০১৬ সালের তুলনায় এই ক্ষেত্রেও নতুন কর্মচারী নিযুক্তি করনের পরিসংখ্যান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়নি।

দেশের বাড়তে থাকা বেকারত্ব এবং ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে নতুন হাওয়া দিতে প্রধানমন্ত্রী যতই আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলুন না কেন বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সংসদের চলতি অধিবেশনে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে মৃত এবং কাজ হারানো প্রবাসী শ্রমিকদের কোন তথ্য কেন্দ্র সরকারের কাছে নেই। এই বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দল নেতারা। তাদের অভিযোগ মোদীর ভুল নীতির কারণে ভুগতে হচ্ছে সাধারন আমজনতাকে। যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

Related Articles

Back to top button
error: