দেশ

লাভ জিহাদ নাকি একতা, সমস্যা কোথায়? নেটিজেনদের বিতর্কের মুখে পড়ে বিজ্ঞাপন তুলে নিল তানিশ্ক

দেবিকা মজুমদার,টিডিএন বাংলা: ভারতের সংবিধান অনুসারে হিন্দু-মুসলিম প্রত্যেকেরই সমানভাবে থাকার অধিকার রয়েছে ভারতে। বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হতেও সংবিধান অনুযায়ী কোন সমস্যা নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? কেন প্রশ্ন উঠছে বারবার লাভ জিহাদের? গত সপ্তাহে প্রকাশিত তানিষ্কের একটি সাধের অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপনী ভিডিও নিয়ে ভারতের সর্বধর্ম সমন্বয় নাকি লাভ জিহাদ কোনটাকে ভারতীয়রা বেশি প্রাধান্য দেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। শেষমেষ সোশ্যাল মিডিয়ার জনগণের প্রবল বিতর্কের মুখে পড়ে নিজের বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বাধ্য হলো তানিশ্ক।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত টাটা কোম্পানির জুয়েলারি ব্র্যান্ড তানিশ্ক একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে যেখানে দেখা যাচ্ছে এক সন্তানসম্ভবা হিন্দু পুত্রবধূর হিন্দু প্রথা অনুসারে সাধের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তাঁর মুসলিম শশুড়বাড়ির পরিবার। এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই তানিশ্ককে বয়কটের ডাক দিয়েছেন নেটিজেনদের এক বৃহৎ অংশ। এমনকি তার চাক্ষুষ ফলাফল দেখা গেছে শেয়ার মার্কেটে। এক ধাক্কায় স্টক এক্সচেঞ্জে তানিস্কের শেয়ার ২.৫ শতাংশ পড়ে গেছে।

এরপরে তানিষ্কের তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, আমাদের কর্মীদের কথা ভেবে ওই বিজ্ঞাপন তুলে নেওয়া হচ্ছে। একাত্মম ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে নতুন জুয়েলারির যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল তার উদ্দেশ্য ছিল এই সময়ে সমাজের সবস্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্যের একটি চিত্র তুলে ধরা। কিন্তু বিজ্ঞাপনটি সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আলোড়ন তুলেছে। মানুষের আবেগে অসচেতনভাবে আঘাত করায় আমরা দুঃখিত।

এদিকে, তানিশ্কেরই বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নেওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে বলিউডের অভিনেত্রীরা পর্যন্ত। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর তানিশ্কের বিরুদ্ধে এ ধরনের বয়কটের ডাকের প্রতিবাদ করে লিখেছেন, হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের যদি একটি এত সুন্দর বিজ্ঞাপনী ভিডিওতে সমস্যা থাকে যেখানে হিন্দু মুসলিম একতার কথা বলা হয়েছে তাহলে তারা বিশ্বের সবথেকে পুরনো হিন্দু মুসলিম একতার প্রতীক ভারতের বিরুদ্ধেই বয়কট কেন ঘোষণা করছেন না?

https://twitter.com/ShashiTharoor/status/1315833504253374464?s=20

অপরদিকে বিজ্ঞাপন তুলে নেওয়ার এই পদক্ষেপকে মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় বলে কটাক্ষ করেছেন অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর। একটি টুইট করে তিনি লিখেছেন, মেরুদন্ডের অভাব এবং দৃঢ় প্রত্যয়ের অভাব।সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিন মহিলারা মৃত্যুর হুমকি পান এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ান আর তানিষ্কার মত একটি বড়োসড়ো কর্পোরেট কোম্পানি মাত্র কয়েকদিনের ট্রোলিং নিয়ে ভয় পেয়ে পিছু হটে গেল।

আসলে গত সপ্তাহে এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ্যে আসতেই ফেসবুক এবং টুইটারের মতন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ছেয়ে যায় হ্যাশট্যাগ বয়কট তানিশ্ক ট্রেন্ডে। একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে তানিশ্কের বিরুদ্ধে। কারুর মতে লাভ জিহাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে তানিশ্ক আবার কারও মতে মুসলিম গয়নার প্রচার করছে তানিশ্ক।

https://twitter.com/Rakesh_Swarajya/status/1316365247611985920?s=20

নেটিজেনদের একাংশ যেমন এই বিজ্ঞাপনটির জন্য তানিশ্ক বয়কটের ডাক দিয়েছিল তেমনি নেটিজেনদের আরেকটি অংশ এই বিজ্ঞাপনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। অনেকেই নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। আবার কেউ কেউ তানিশ্ককে এই বিজ্ঞাপনটি তুলে নিতে হবার জন্য লজ্জা বোধ করেছেন।

https://twitter.com/boynationalist1/status/1316324817667145728?s=20
https://twitter.com/vineesha_b/status/1316295380112293888?s=20

Related Articles

Back to top button
error: