সন্তান হারানোর শোকে শামিল হননি বিরোধীরা; একতা দিবস উপলক্ষে স্ট্যাচু অব ইউনিটির পাদদেশ থেকে দাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর
টিডিএন বাংলা ডেস্ক: সম্প্রতি পাকিস্তানের সংসদীয় অধিবেশন চলাকালীন ইমরান সরকারের গুণগান গাইতে গিয়ে পাক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী স্বীকার করেছিলেন পুলবামা হামলার পিছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। এই বিষয় নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে রাজনীতি। একের পর এক বিজেপির বরিষ্ঠ নেতারা পুলবামা হামলায় পাকিস্তানের স্বীকারোক্তির বিষয়ে কংগ্রেসের মৌনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন। এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্মদিনে পালিত একতা দিবস উপলক্ষে গুজরাটের স্ট্যাচু অফ ইউনিটির পাদদেশ থেকে সরাসরি আক্রমণ করলেন বিরোধীদের। তার দাবি, গোটা দেশ যখন সন্তান হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল সে সময় বিরোধীরা সেই শোকে শামিল হননি।
শনিবার সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ১৪৫ তম জন্ম দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুলবামা প্রসঙ্গে বিরোধীদের এক হাত নিয়ে বলেন, আজ অফিসারদের কুচকাওয়াজ দেখে পুলবামা হামলা আর একটা দৃশ্যের কথা মনে পড়ে গেল। সন্তান হারানোর শোকে যখন গোটা দেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল, তখন কিছু মানুষ এই শোকে শামিল ছিলেন না। পুলবামা হামলা নিয়ে তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির পথ খোজার চেষ্টা করেছিলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন,গত কয়েকদিনে প্রতিবেশী দেশের কাছ থেকে যে ধরনের খবর এসেছে যেভাবে তারা তাদের সংসদের পুলবামা হামলা নিয়ে স্বীকারোক্তি করেছে,তারপরে যারা এতদিন ধরে এই হামলার কথা অস্বীকার করেছিলেন তাদের আসল চেহারা সামনে এসে গেছে। রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যে মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে পুলবামা হামলা পরবর্তী রাজনীতি তারই প্রমাণ।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফের একটি দলের ওপর বিষ্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে হামলা করা হয়েছিল। ওই হামলায় ভারতের ৪০ জওয়ান শহীদ হন। জইস এ মহম্মদের জঙ্গিরা আচমকা সিআরপিএফের গাড়ির সাথে একটি আইইডি ভর্তি গাড়ির বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনার পর কড়া নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে কিভাবে জঙ্গিরা আইইডি ভর্তি গাড়ি নিয়ে সিআরপিএফের কনভয়ের কাছে পৌঁছে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে এই ঘটনা ঘটার ফলে নির্বাচনী প্রচারে বারংবার এই ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জেরবার করার প্রচেষ্টা করা হয় বিজেপিকে। চলতি বছরেও পুলওয়ামা হামলার ঘটনার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সেনাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমন করতে দেখা যায় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে। হামলার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন করার পথ পাশাপাশি রাহুল গান্ধী এই ঘটনায় কারা সব থেকে বেশি লাভবান হয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এদিকে, পাকিস্তানের সংসদে পুলবামা হামলা নিয়ে সরাসরি স্বীকারোক্তি করার পর নিজের মন্তব্যের সাফাই দিয়ে পাক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি জানান যে তিনি সংসদে এটা বলেছিলেন যে পুলবামা হামলার পর আমাদের বিমান ভারতীয় সেনা ছাউনিতে নিশানা করতে সফল হয়েছিল।নিরীহ মানুষদের হত্যা করে সাহসিকতা প্রদর্শনের তাদের কোনো আগ্রহ নেই বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তবে তার এই সাফাইয়ের খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি রাজনৈতিক মহলে। ইতিমধ্যেই সংসদে তার বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় হওয়া শুরু করেছে ভারতের রাজনৈতিক প্রাঙ্গণ। পুলবামা হামলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য গোটা দেশের সামনে বিরোধীদের ক্ষমা চাইবার জন্য দাবি করে বিজেপি। কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপির নিশানায় চলে আসেন তৃণমূল সভানেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও পুলবামা হামলার ঘটনায় জঙ্গিরা কিভাবে নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে সিআরপিএফের গাড়ির সামনে এসে পড়েছিল মূলত তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে পুলবামাকে হাতিয়ার করে বিজেপির ভোট প্রচারের কৌশলকে প্রশ্ন করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।