দেশ

ছাত্র নেতা উমার খালিদের গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা: দিল্লী হিংসায় যোগসাজশের অভিযোগে রবিবার রাতে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদকে। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, হিংসার ঘটনায় উমর খালিদ ছিলেন অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। অন্যতম অভিযুক্ত আম আদমি পার্টির কাউন্সিলর তাহির হুসেনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগ ছিল উমর খালিদের। দু’জনে মিলে শলাপরামর্শ করে হিংসাকে আরও বাড়াতে ভূমিকা নিয়েছিল।
এদিকে উমর খালিদের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে দেশের নাগরিক সমাজ। লেখক,কবি,সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা এক যোগে গ্রেফতারের নিন্দা জানান।
সমাজকর্মী হর্ষ মন্দার উমার খালিদের গ্রেফতারী প্রসঙ্গে লেখেন,’তিনি এই দেশের এমন একজন আদর্শবাদী, প্রগতিশীল এবং সাহসী যুবক ছিলেন যার ওপর গর্ব হওয়া উচিত। আমরা একসাথে সিএএ আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। তিনি সব সময় অহিংসা এবং গান্ধীর কথা বলেছেন। আজ চক্রান্ত করে সাজানো অভিযোগের ভিত্তিতে দানবিক ইউএপিএ আইনের আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। আমার দেশ, সোচ্চার হও।”
অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর টুইটে হ্যাশট্যাগ স্ট্যান্ড উইথ উমর খালিদ এবং হ্যাশট্যাগ ফ্রী উমর খালিদ লিখে দিল্লি পুলিশের পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানান।

উমর খালিদের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর।
হ্যাশট্যাগ স্ট্যান্ড আপ উইথ উমর খালিদ লিখে শশী থারুর দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী সমালোচকদের স্বাগত জানানোর বার্তা দিলেও সমালোচনা করার পর তাদের কি মূল্য দিতে হবে তা উল্লেখ করতে ভুলে যান। নিজের টুইটারে মন্তব্যের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি এসকিউআর ইলিয়াসের একটি মন্তব্য তুলে ধরেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে লক্ষ্য করে দলিত নেতা জীগনেশ মেবানীর মন্তব্য,’উমর একজন যোদ্ধা। আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন কিন্তু আপনারা উমর খালিদকে হারাতে পারবেন না, অমিত শাহ মহাশয়। হ্যাশট্যাগ স্ট্যান্ড উইথ উমর খালিদ, হ্যাশট্যাগ রিলিজ অল পলিটিকাল প্রিজনার্স।’
প্রাক্তন আইএএস অফিসার তথা বামপন্থী নেতা কান্নান গোপিনাথ জানান,’উমর খালিদ একজন বুদ্ধিমান, সাহসী এবং শক্তিশালী মানুষ। আগামীর ভারতের একজন ব্যক্তিত্বপূর্ণ নেতা। দিল্লি পুলিশের কিছু শাসকদলের কথায় মাথা নাড়ানো পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তিনি, যারা উমর খালিদের বুদ্ধিমত্তা বা তার মেরুদণ্ডের শক্তির ধারে কাছে আসেন না, তারা নিজেদের কর্তব্যের সম্মানহানি করছেন।’
এছাড়া ঐতিহাসিক রাম চন্দ্র গুহ, বাম নেত্রী ঐশী ঘোষ,কুনাল কামরা,সুচিত্রা বিজয়ন, সহ দেশের বিশিষ্টজনেরা উমার খালিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
লেখিকা নাতাশা ভাদয়ার টুইটারে তুলে ধরেছেন ছাত্রনেতা উমার খালিদের একটি ভাষণের কয়েকটি লাইন। যেখানে ওমর খালিদ বলেছেন,”আমরা ঘৃণার জবাব ভালোবাসা দিয়ে দেব। যখন তারা আমাদের মারার হুমকি দেবে তখন আমরা তিরঙ্গা হাতে তুলে নেব। যদি তারা গুলি চালান তাহলে আমরা সংবিধান হাতে নিয়ে আমাদের স্বর জোরালো করব। যদি আমাদের জেলে পাঠানো হয় তাহলে আমরা হাসিমুখে সারে জাহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা গাইতে গাইতে জেলে চলে যাব। কিন্তু এই দেশকে আপনাদের ধ্বংস করতে দেব না।”

উমার খালিদের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করেছে স্টুডেন্ট ইসলামিক অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া। ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি লাবিদ শাফি পুলিশের এহেন পদক্ষেপের পর প্রশ্ন তুলেছেন,’আমরা কি পুলিশ শাসিত রাজ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছি?’ তাঁর মন্তব্য, ‘দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমান করোনা সংক্রামিত বিশ্বে মতবিরোধকে শেষ করে ফেলা খুবই সহজ। পুলিশকে আজকের সিএএ বিরোধীদের অপরাধী বানাতে দেবেন না। এটা একটা স্পষ্ট নিশানা, হেনস্থা, নৃশংসতা, গ্রেপ্তার, আটক ও ভয় দেখানোর উদাহরণ। এটা একেবারে স্পষ্ট যে আমরা একটি পুলিশ শাসিত রাজ্যের দিকে এগিয়ে চলেছি। এই ধরনের ভুলভাল অভিযোগ প্রত্যাহার করা উচিত এবং যাদেরকে এধরনের সাজানো অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে তাদের দ্রুত মুক্ত করা উচিত।”

সোমবার উমার খালিদের মুক্তির দাবীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পথে নামে ওয়েলফেয়ার পার্টির কর্মীরা। দলটির কেন্দ্রীয় সভাপতি সহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতারা উমার খালিদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান।
বিশিষ্ট সাংবাদিক রানা আইয়ুব উমার খালিদের পক্ষ নিয়ে টুইটারে লেখেন,
গণতন্ত্রে প্রতিবাদ করার জন্য উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই দেশে আপনাকে এবং সত্য কথা বলার জন্য কারাবন্দী হওয়া সাহসী কণ্ঠস্বর প্রাপ্য নয়। পরিশেষে ওমর খালিদ এর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে দিল্লি পুলিশের পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন রানা আইয়ুব।
সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান,’ইয়েচুরি, যোগেন্দ্র যাদব, জয়তি ঘোষ এবং অপূর্ব আনন্দের নাম উল্লেখ করার পর দিল্লি পুলিশের উমর খালিদকে গ্রেফতারি নিঃসন্দেহে দিল্লি দাঙ্গা মামলার তদন্তে পুলিশের অনৈতিক মনোভাবের পরিচয় দেয়। এটা একটা ষড়যন্ত্র যার মাধ্যমে তদন্তের ছদ্মবেশে শান্তিপূর্ণ কর্মীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।”
জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদ সভাপতি ঐশী ঘোষ উমার খালিদের পাশে দাঁড়িয়ে টুইটারে লিখেছেন, কপিল মিশ্রা, অনুরাগ ঠাকুর বলেছেন গুলি মারতে বলেছেন। আর সিএএ বিরোধীরা বলেছেন, আমরা দেশ বাঁচাতে, সংবিধান বাঁচাতে বেরিয়েছি, এসো,আমাদের সঙ্গে চল! সংবিধান এবং গণতন্ত্রের রক্ষা করা আমাদের দেশে এখন আইনত অপরাধ!’
উমর খালিদের গ্রেফতারির বিরোধিতা করে জম্মু কাশ্মীরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ সইফুদ্দিন সোজের পুত্র তথা অল ইন্ডিয়া প্রফেশনাল কংগ্রেসের ডেপুটি চেয়ারম্যান সলমান আনিস সোজ টুইট করে লেখেন,”সমস্যা উমর খালিদ নন। সমস্যা এখানে: বিধ্বস্ত অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সঙ্কট এবং একটি জাতীয় সুরক্ষা সঙ্কটের দায়িত্বে ব্যর্থ, অনিরাপদ এবং প্রতিরোধমূলক সরকার এবং আদালতে মতবিরোধের অধিকার রক্ষা না হওয়া একটি বড় সমস্যা।”

এদিন সমাজকর্মীরা অভিযোগ করেন, কপিল মিশ্র সহ বিজেপির একাধিক নেতা হিংসায় উস্কানি দিলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। আসলে সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধী কণ্ঠকে দমন করছে।
ওয়েলফেয়ার পার্টির পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি মনসা সেন এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন,’উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়ে যারা দিল্লী দাঙ্গা ঘটালো তারা নিরাপদে আছে, অন্যদিকে নির্দোষদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে সরকার এই কাজ করছে। ইউএপিএ একটা অসাংবিধানিক আইন,এই আইন জনগণের অধিকার এবং স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেবে, এর বাস্তবরূপ দেখতে পেলাম। সিএএ বিরোধী আন্দোলন করা কোনো অপরাধ নয়, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। উমার খালিদকে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
সিএএ,এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের নেতা যোগেন্দ্র যাদবের প্রশ্ন, তদন্ত শুরুর আগেই মার্চে সংসদে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চক্রান্তকারীদের নাম বলেছিলেন কী ভাবে? সেই তালিকা কি তবে তদন্তের আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল?

এদিকে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র টুইটারে তাহির, উমার খালিদ সহ একাধিক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তিনি এইসব ব্যাক্তিদের শাস্তির দাবি করেছেন। যে সমস্ত বিজেপি নেতার দিকে প্ররোচনার অভিযোগের আঙুল, তাঁদের অন্যতম কপিল মিশ্র উমরের গ্রেফতারির জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন দিল্লি পুলিশকে। দাবি করেছেন, দীর্ঘ দিন ধরে দিল্লিতে বড় মাপের গোষ্ঠী সংঘর্ষের সলতে পাকাচ্ছিলেন তাঁরা। যা নাকি মুম্বইয়ের ২৬/১১-র হামলার থেকে কম ভয়ঙ্কর হত না। সেই কারণে উমরের মতো দোষীদের ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত বলে ভিডিয়ো-টুইটে তাঁর দাবি।

Related Articles

Back to top button
error: