দেশ

লকডাউন শেষ হয়ে গেলেও, ভাইরাস চলে যায়নি; করোনার সংক্রমণ নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ফের সতর্কবার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

টিডিএন বাংলা ডেস্ক: মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই নিয়ে সপ্তমবার জাতির উদ্দেশ্যে এভাবে ভাষণ দিতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। এদিনের ভাষণে দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে বারংবার করোনার সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২ গজের দূরত্ব এবং মাস্ক পরার ওপর জোর দেন তিনি। দেশবাসীকে উৎসবের আবেশে ভাসতে গিয়ে করোনার সংক্রমণ নিয়ে অসতর্ক না হবার জন্য অনুরোধ করেন মোদি। মনে করিয়ে দেন লকডাউন শেষ হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত শেষ হয়ে যায়নি করোনা ভাইরাসের প্রভাব। পাশাপাশি লকডাউন উঠে যাওয়ার সাথে ধীরে ধীরে ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ১২ মিনিটের একটি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কারফিউ থেকে শুরু করে লকডাউন সবক্ষেত্রেই ভারতবাসীরা সবাই একত্রিত হয়ে লড়াই করে গেছে। সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই জীবিকার প্রয়োজনে প্রতিদিন ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন। উৎসবের এই সময় বাজারে ও ধীরে ধীরে গতি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের এটা ভুললে চলবে না যে লকডাউন শেষ হয়ে গেলেও ভাইরাস চলে যায়নি। বিগত সাত-আট মাস ধরে লাগাতার প্রচেষ্টায় ভারত আজ যে পরিস্থিতিতে রয়েছে সেই পরিস্থিতিতে খারাপ হতে দেওয়া যাবে না। বরং আরও বেশি করে পরিস্থিতি ভালো করার দিকে সচেষ্ট হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা সংক্রমণে নিরিখে ভারতের সঙ্গে আমেরিকা এবং ব্রাজিলের মতো দেশগুলির তুলনা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে যেখানে প্রতি ১০ লক্ষে সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে আমেরিকা এবং ব্রাজিলে সেই পরিসংখ্যান ২৫ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অপরদিকে, ভারতে প্রতি ১০ লক্ষে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেখানে ৮৩ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেখানে আমেরিকা এবং ব্রাজিলে এই মৃতের সংখ্যা প্রায় ৬০০-র বেশি বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এর পাশাপাশি বর্তমানে দেশে করোনার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ৯০ লক্ষের বেশি বেডের সুবিধা, ১২ হাজার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার এবং ২ হাজার ল্যাব যেখানে করোনার ভ্যাকসিন টেস্টিং চলছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ্যে আসছে যেখানে দেখা যাচ্ছে মানুষ উৎসবের আবেশে মাছ না পড়েই দোকান বাজার করতে বেরিয়ে পড়েছেন। ওই সমস্ত মানুষদের ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন তারা যদি মাস্ক না পরে বের হন তাহলে তারা নিজেদের পরিবার, নিজেদের সন্তান, নিজেদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে বিপদের সম্মুখীন করছেন। এ প্রসঙ্গে আমেরিকা এবং ব্রাজিলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন আমেরিকা এবং ব্রাজিলে করোনা সংক্রমনের হার ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছিল কিন্তু হঠাৎই আবার ওই সমস্ত দেশে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে করোনার সংক্রমণ।

কর্নার সংক্রমণ নিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করতে সন্ত কবীর দাস এর একটি দোঁহা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন,”অনেক সময় আমরা পাকা ফসল দেখে মনে করি এবার তো কাজ হয়ে গেছে কিন্তু, যতক্ষণ ফসল ঘরে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এটা মনে করা উচিত নয়। এটাই কোভিদ দাস জি বলে গেছেন। অর্থাৎ যতক্ষণ না, সফলতা সম্পূর্ণ না পাওয়া যায় অসতর্কতা করা উচিত নয়। সাথীরা যতদিন না এই মহামারীর ভ্যাকসিন এসে যাচ্ছে, আমাদের করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইকে বিন্দুমাত্র কমজুড়ী হতে দেওয়া যাবে না।”

এরপর করণা ভ্যাকসিনের দ্রুত বরণের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,”অনেক বছর পর দেখা যাচ্ছে মানবতাকে বাঁচানোর জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পুরো বিশ্বে কাজ হচ্ছে। অনেক দেশের এর জন্য কাজ করছে। আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিকরাও ভ্যাকসিন এর জন্য লাগাতার প্রচেষ্টা করছেন। ভারতে এখন করোনার অনেকগুলি ভ্যাকসিনের উপর কাজ করা হচ্ছে। এমন কিছু এডভান্স স্টেজে রয়েছে আসাসজনক স্থিতি দেখা যাচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন যখনই আসবে তা যাতে প্রত্যেক ভারতীয়র কাছে দ্রুত সম্ভব বন্টন করা যায় তার জন্য সরকারের প্রস্তুতি চলছে। প্রত্যেক নাগরিকের কাছে যাতে ভ্যাকসিন পৌঁছয় সেজন্য দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।”

পরিশেষে রামচরিত মানুষের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফের একবার জাতির উদ্দেশ্যে করোনার সংক্রমণ নিয়ে সর্তকতা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “আগুন, শত্রু, পাপ অর্থাৎ ভুল এবং রোগকে কখনোই ছোট মনে করা উচিত নয়। যতদিন না এর সম্পূর্ণ চিকিৎসার না হয়ে যায়, এদের অবহেলা করা উচিত নয়। তাই, মনে রাখুন যতদিন পর্যন্ত ওষুধ নেই ততদিন পর্যন্ত অসতর্কতা নয়।”

নিজের ভাষণের শেষে এরপর নবরাত্রি, দশেরা, ঈদ, দীপাবলি, ছট পুজো, গুরু নানক জয়ন্তী সহ সমস্ত অনুষ্ঠানের জন্য দেশবাসীর উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে পুনরায় দূরত্ব, প্রত্যেক মুহূর্তে হাত ধোয়া এবং মাস্ক পড়ার কথা মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

Related Articles

Back to top button
error: