দেশ

কেন নিষিদ্ধ চিনা কোম্পানির অনুদান স্বীকার করেছে কেন্দ্র? পিএমকেয়ার ফান্ডে চিনের অনুদান প্রসঙ্গে মোদি সরকারকে বিদ্ধ করলেন মহুয়া মৈত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, টিডিএন বাংলা: শনিবার লোকসভায় বাদল অধিবেশনের ষষ্ঠ দিনে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র পিএম কেয়ার ফান্ড প্রসঙ্গে কোণঠাসা করলেন কেন্দ্রের মোদী সরকারকে। একের পর এক দলিল তুলে ধরে পিএম কেয়ার ফান্ডের প্রাসঙ্গিকতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন মহুয়া মৈত্র। ভারত চীন সীমান্ত বিবাদের পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে যে চাইনিজ কোম্পানিকে ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা করেছে সরকার সেই চিনা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকেই কিভাবে অনুদান গ্রহণ করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

পিএম কেয়ার ফাণ্ডে জমা হওয়া অনুদান প্রসঙ্গে এদিন সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেন, যে চাইনিজ কোম্পানি অবৈধভাবে দেশের জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নজরদারি করার অভিযোগ করেছে সরকার সেই চাইনিজ কোম্পানি শাওমি ১০ কোটি টাকা অনুদান করেছে। তাঁর অভিযোগ কয়েক সপ্তাহ আগে সরকার যে চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে সেই চিনা অ্যাপ টিক টক পিএম কেয়ার তহবিলে ৩০ কোটি টাকা অনুদান করেছে। এছাড়া হুএয়াই বিশ্বখ্যাত তার চীন সেনার সঙ্গে যোগসূত্রের জন্য সেই কোম্পানি প্রধানমন্ত্রীর ওই তহবিলে ১০ কোটি টাকা অনুদান করেছে। মহুয়া মৈত্র সরকারের কাছে প্রশ্ন, কেন আপনি শত্রু দেশের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়েছেন? কেন আপনি ওই টাকা ফেরত দিয়ে দিচ্ছেন না? তিনি বলেন,”আমি নিশ্চিত এই সময় কোন মরণাপন্ন ভারতীয় ভেন্টিলেটরের জন্য শত্রুর টাকা ব্যবহার করতে চাইবেন না। চাইবেন কি?”

শুধু তাই নয়, এই অনুদান প্রসঙ্গে মহুয়া মৈত্রের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর এই তহবিলের ৭০% অনুদান এসেছে দেশের মোট ৩৮ টি পাবলিক সেক্টর ইউনিট অর্থাৎ পিএসইউএর কাছ থেকে। যার পরিমাণ প্রায় ২১,০০০ এটি টাকা। কোল ইন্ডিয়া, এনজিসির মত সরকারি দপ্তরগুলি যেন এই তহবিলের টাকা দেওয়ার জন্য একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। পাশাপাশি দেশের উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর ওই তহবিলে অনুদান করতে বাধ্য করার প্রসঙ্গে মহুয়া মৈত্র বলেন, দেশের চলতে থাকা পরিস্থিতিতে ওই অনুদান না দেবার দুঃসাহস কে করবেন?

এ প্রসঙ্গে, পিএম কেয়ার ফান্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের এই সাংসদ। তাঁর অভিযোগ পিএম কেয়ার ফান্ড সিআরএ রেগুলেশনস আওতার বাইরে। এমনকি ওই ফান্ড এর ব্যাপারে বিশদ জানতে চাইলে বা, আরটিআই অর্থাৎ রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট এর আওতায় প্রশ্ন করতে চাইলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি কোন পাবলিক অথরিটি নয়।

পিএম কেয়ার ফান্ডের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে মহুয়া মৈত্র আরো বলেন, সরকার বলেছে দু’হাজার কোটি টাকা পিএম কেয়ার ফান্ড থেকে ব্যয় করা হয়েছে ৫০ হাজার ভেন্টিলেটার কেনার জন্য। যদিও কোন কোন হাসপাতালে কোন জেলায় আদতে কতগুলি ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে বিশদ কোন তথ্য সরকার প্রকাশ করেনি। মহুয়া মৈত্রের প্রশ্ন, দেশে যেভাবে বিমান, রেল বেচে দেওয়া হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু পুঁজিবাদীদের হাতে, সেভাবেই কি এই ভেন্টিলেটরগুলির ক্রয় প্রক্রিয়া ওই সমস্ত পুঁজিবাদীদের হাত দিয়েই করা হয়েছে?

এরপর, প্রধানমন্ত্রীর এই তহবিলের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী মহুয়া মৈত্র। এর আগে, প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকা সত্বেও পিএম কেয়ার ফান্ড তৈরি এবং তা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা এবং পিএম কেয়ার ফান্ডের টাকা জাতীয় ত্রাণ তহবিলে স্থানান্তরিত করে দেওয়ার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনজীবী মহুয়া মৈত্র। যদিও সেখানে এ বিষয়ে কোনো সুরাহা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত জনতার আদালত তথা লোকসভায় শনিবার এ নিয়ে ফের সরব হন তিনি। মহুয়া মৈত্র এর প্রশ্ন, “প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকা সত্বেও পিএমকে আরফান কেন? নতুন তহবিলের প্রয়োজনীয়তা কোথায়?” তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীরা আসবেন যাবেন, কিন্তু তহবিল থাকবে। তাহলে একজনের নামে সবকিছু করার প্রয়োজনীয়তা কোথায়?” এ প্রসঙ্গে, তিনি আরো বলেন, “সরকারকে এটা মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে যে এটা গণতন্ত্র, একটি র্নির্বাচিত একনায়কতন্ত্র নয়।”

পরিশেষে, পিএম কেয়ার ফান্ডের নামে দেশের জনসাধারণের কাছে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বাক্য বিতে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মহুয়া মৈত্র। পাশাপাশি ভেন্টিলেটর কিনার জন্য দু’হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রসঙ্গকেও নিজেদের বিজ্ঞাপনী প্রচার হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর উলঙ্গ রাজা কবিতা থেকে একটি লাইন উদ্ধৃত করে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে শেষ প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করেছেন মহুয়া মৈত্র। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর শেষ প্রশ্ন, “রাজা, তোর কাপড় কোথায়?”

Related Articles

Back to top button
error: