সাহিত্য ও সংস্কৃতি

গল্পের নাম:- “রিজু বাঁচতে চেয়েছিলো” গল্পকার:-মোস্তফা কামাল (পর্ব ২৫)

(পর্ব ২৫)

করোনা নামক মারণ ব্যাধি এখন সারা পৃথিবী ব্যাপী। তার নিষ্ঠুর হাত থেকে রেহাই পেতে টানা দুই বছর ধরে লক ডাউন চলছে। আর কতদিন চলবে কে জানে। এই অবসরে মানুষ এখন গৃহবন্দি। শত ব্যস্ত থাকা মানুষগুলোর হাতে এখন অফুরন্ত সময়। কর্ম বিরতির এ এক অন্য ধরনের স্বাদ। লক ডাউনে যেমন সন্তানকে কাছে পেয়েছেন বৃদ্ধ বাবা মা তেমনি বাবা মাকে কাছে পেয়েছে সন্তানেরা। বৌ স্বামীকে স্বামী বৌকে। অফুরন্ত সময়। সময় যেন কাটেনা।

এই অসময়ে অসহায় মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখ কষ্ট ভাগ করে নিতে অনেকেই ব্যস্ত। রিজুও। সেই ছোটবেলা থেকেই অসহায় মানুষের জন্য তার প্রাণ কাঁদে। তাদের দুঃখ ওর নিজের দুঃখ মনে হয়। বস্তির অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সবরকম চেষ্টা করে। তাদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে জীবন বাঁচায়। মারণ ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেতে সর্বদা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সমাজ সচেতনতা মূলক কর্মসূচি নেয়। সাথ দেয় তার কলেজ পড়ুয়া ছোট্ট মেয়ে খুশি।

বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস রিজুর চিরদিনের। সে শত্রু হোক বা মিত্র। তখন রিজু কলেজের ছাত্র। কোলকাতা থেকে বাড়ি এসেছিল। তার এক প্রতিবেশীকে রাতের বেলায় সাপে কেটেছিল। তার পরিবারের লোকজন হাসপাতাল নিয়ে যেতে গড়িমসি করায় রিজু নিজের সাইকেলে চাপিয়ে রাতের অন্ধকারে হাসপাতাল নিয়ে যেতে গিয়ে বড়ো গর্তে পড়ে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছিল। কপাল ফেটে রক্ত বেরিয়েছিল। সেলাই পড়েছিল। এখনো রিজুর কপালে আঘাতের সেই চিহ্ন রয়েছে। রিজু মনে করে, এটা আঘাতের চিহ্ন নয়। এ চিহ্ন পরোপকারের,এই চিহ্ন ভালবাসার।

পৃথিবীর এই দুঃসময়ে মাঝে মধ্যে একাকীত্ব গ্রাস করে রিজুকে। শালিনীর কথা খুব করে মনে পড়ে। রিজু জানে না শালিনী কোথায় আছে, কেমন আছে! ভালো থাকার কথা নয় শালিনীর। সেই যে কবে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তা মনে নেই। কিন্তু শালিনীর অদৃশ্য উপস্থিতি রিজু অনুভব করে। মনে হয় ও সবসময় তার পাশেই রয়েছে। কখনো কখনো শালিনীর সঙ্গে কথাও বলে। বলে অনেক না বলা কথা।

মিতার উপর রাগ করে থাকলে শালিনী আসে। মাথার চুলে আলতো হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলে, “এভাবে তুমি কার উপর রাগ করছো? মিতাদি তো একজন মানুষ নাকি! সারাদিন তোমার সংসারে ভূতের মতো খাটছে আর তুমি তার উপর রাগ দেখাচ্ছো। এটা ঠিক করছো না। তুমি জানো, তুমি রাগ করলে মিতাদির খুব কষ্ট হয়। কেঁদে কেঁদে ও চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলে! তুমি ছাড়া ওর আর কে আছে বলো?”

হঠাৎই ঘুম ভেঙ্গে যায় রিজুর। দৌড়ে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে কেঁদে কেঁদে মিতা বুক ভাসিয়েছে। রিজু ওর হাত দিয়ে চোখের জল মুছে দেয়। জিজ্ঞেস করে, “খেয়েছো?”
মিতা উত্তর করে না। শুধু ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে।

রিজু বুঝতে পারে মিতা ওকে খুব ভালোবাসে। মনে আনন্দ হয়। অন্ততঃ পৃথিবীতে কেউ একজন তো আছে যে রিজুর দুঃখে দুঃখী হয়, সুখে সুখী হয়। মিস্টি হাসি দিয়ে বলে, ওঠো তো,আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে। খেতে দেবে চলো।

মিতা চোখ তুলে তাকায়। বলে, তুমি আমাকে এইভাবে আর কখনো রাগ দেখিওনা। তুমি রাগ করলে আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। আমি সহ্য করতে পারিনা।

রিজু মিতার হাতের আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে একটু চাপ দিয়ে বলে, ঠিক আছে দেখাবো না। মিতা চোখ মুছে মিস্টি হাসে। খেতে দেয় রিজুকে।

স্বপ্নে যখনই শালিনীর সঙ্গে দেখা হয় তখনই শালিনী রিজুকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছো রিজু?” রিজু উত্তর দিতে পারেনা। শুধু ফ্যালফ্যাল করে শালিনীর দিকে চেয়ে থাকে। তারপর কখন যেন হঠাৎ ই শালিনী অদৃশ্য হয়ে যায়। রিজু একটা শূণ্যতা অনুভব করে। নিজের বুকে হাত বুলিয়ে একটু শান্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। তার মনে হয়, কখনো তো শালিনী কেমন আছে জিজ্ঞেস করা হয়না। রিজু বড়ো স্বার্থপর। সে শুধু নিজের কথাই ভাবে। এবার জিজ্ঞেস করবে ও কেমন আছে।

রিজু ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু শালিনী আসে না। গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিছুতেই ঘুম আসতে চাইনা। পুরোনো ডায়েরিটি বের করে রিজু। সেখানে তাদের কত স্মৃতি লেখা রয়েছে। লেখা গুলোতে হাত বুলায় রিজু। টপ টপ করে জল গড়িয়ে পড়ে ডায়েরির পাতা ভিজে যায়। এভাবে কত রাত কেটেছে রিজুর তার কোনো হিসাব নেই।

স্কুল থেকে আজ ফিরতে দেরি হয়েছে । মিতা জিজ্ঞেস করে, কি গো,আজ ফিরতে এতো দেরি হলো কেন? স্কুলে কোনো ঝামেলা টামেলা হয়নি তো? রিজু শুধু মাথা নাড়ায়। আজ কারোর সঙ্গে ওর কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। স্কুলের ক্লাসগুলোও আজ ভালভাবে নেওয়া হয়নি। কি জানি কী সব ঘুরপাক খাচ্ছে ওর মাথায়।

রিজু বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হলে মিতা খুব চিন্তা করে। সালাম মাস্টার লোকটা ভালো নন। স্কুলের পাশেই ওর বাড়ি। ওকে বিশ্বাস হয়না। সুযোগ পেলেই হয়তো রিজুর কোনো ক্ষতি করে দেবে এই চিন্তায় মিতা চিন্তিত থাকে।

……….কী গো,কথা বলছো না কেন?

………..ভালো লাগছে না তাই।

………..কেন কী হয়েছে?

…………কিছু না।

…….. কিছু না বললে হবে? কিছু তো হয়েছেই।

রিজু কোনো কথা বলেনা। মিতার সন্দেহ হয়। তাহলে নিশ্চয়ই শালিনীর কথা মনে পড়েছে। ওর কথা মনে পড়লে রিজ অন্যমনস্ক হয়ে যায়। তখন ওর কিছুই ভালো লাগে না। মিতাকেও সহ্য হয়না। ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়। তখন মিতা কিছু বলতে পারেনা। শুধু নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে চোখের জল ফেলে।

……… তুমি সারাজীবন শালিনীর কথা চিন্তা করবে তো তাকে বিয়ে করোনি কেন? আমি কী দোষ করেছিলাম। আল্লাহ! আমার কপালে এসব লেখা ছিল! এর থেকে আমার মরণ ভালো ছিল! ঠোঁট ফোলাতে থাকে মিতা।

……..ও সব কী বলছো মিতা? শালিনীর কথা আসছে কোথা থেকে?

……….. তুমি সত্যি করে বলো তো, তুমি শালিনীর কথা চিন্তা করেছো না? আমি তোমার সঙ্গে ঘর করছি, তোমার প্রতিটি চলার লক্ষণ আমি বুঝি!

……..তাই নাকি! তাহলে বলো আমি কী করবো? আমি যে ওকে ভুলে থাকতে পারিনা। আজ পঁচিশটি বছর হয়ে গেল আমাদের সংসার। তবুও শালিনীকে কেন আমি আমার সংসার থেকে আলাদা ভাবতে পারিনা?

……… হায় আল্লাহ! এ আমি কার সঙ্গে ঘর করছি! এতোদিন পরে একথাও আমাকে শুনতে হচ্ছে! এই শোনো, তুমি, তুমি শালিনীকে বিয়ে না করে আমাকে কেন করেছিলে বলো, বলো! তুমি এক্ষুনি যাও! গিয়ে শালিনীকে বিয়ে করে নিয়ে এসো! মিতা উত্তেজিত হয়।

……….আমি শালিনীকে কেন বিয়ে করতে পারিনি সেটা তোমাকে অনেকবার বলেছি মিতা। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে এতো বছর পরেও তোমাকে আমি বোঝাতে পারিনি।

………না! আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাইনা। আমি কিছু বুঝতে চাই না। তোমাকে শালিনীর কথা ভুলতেই হবে।

……. আমি তো ভুলতেই চাই মিতা। কিন্তু ভুলতে পারি কই?

…… আমাকে তুমি বিয়ে করেছ, তুমি শুধু আমার। আমার কথাই তুমি ভাববে। আর কারো কথা নয়। আর তুমি যদি আমাকে পেয়ে সুখী না হও, বলে দাও! আমার দুই চোখ যেদিকে যাবে আমি সেদিকে চলে যাব। তোমার পথের কাঁটা হয়ে থাকতে চাই না।

………. আমি কি কখনো বলেছি, তোমাকে পেয়ে আমি সুখী না?

……… তাহলে শালিনীর কথা আসে কেন তোমার মনে?

……… ও তুমি বুঝবে না।

………কেন বুঝবো না?

….. এতোদিন যখন তোমাকে বোঝাতে পারিনি তখন আর তুমি বুঝবে না।

মিতা হঠাৎ ই পাগলের মত আচরণ শুরু করে দেয়। রাগে তার শরীরটা কাঁপতে থাকে। হাতের কাছে বটিটা নিয়ে তার উল্টো দিক দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করে। কানের দুপাশ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে। মিতা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। তার পর নিজেই বলে ওঠে, “এটা কেন আমি করলাম? আমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? মাথা খারাপ হলেও বেঁচে যায়। এই যন্ত্রণা থেকে তো মুক্তি পাই!”

আকস্মিক ঘটনায় রিজু স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। মিতা ইদানিং যেন অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। এর আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। একদিন রিজুর সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠে। হাতের কাছে একটা আধলা ইঁট তুলে নিজের বুকে বার কয়েক বসিয়ে দেয়। মনের যন্ত্রণা রিজুকে বোঝাতে না পেরে নিজের শরীরকে যন্ত্রণায় বিষিয়ে দিয়ে শান্ত হয়।

রিজু দ্রুত ডাক্তারের কাছে ছুটে। মাথায় ছোট একটা ব্যান্ডেজ বেঁধে দেন ডাক্তার। তিনি মিতাকে মানসিক বিশ্রামের পরামর্শ দেন। একটা মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। মিতা ধীরে ধীরে একটা মানসিক রুগীতে পরিণত হয়।

খুশি বাড়িতে ছিল না। কলেজ থেকে ফিরে দেখে মায়ের মাথায় ব্যান্ডেজ। ও দেখে আঁৎকে উঠে। বই খাতা বিছানায় ছুড়ে ফেলে মায়ের কাছে ছুটে যায়। জানতে চায় কীভাবে এমনটি হলো। মিতা কিছু বলতে চায়না। মেয়ের কাছে ও লজ্জা পায়।

খুশি ছাড়ার পাত্রী নয়। বাবাকে প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করে। ও আইনের ছাত্রী। ওর কাছে কিছু লুকোনোর উপায় নেই। ফৌজদারি আইনের কোন ধারায় রিজুর কী শাস্তি প্রাপ্য তার হুকুম জারি করে। আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারক মেয়ের কাছে রিজু নত হয়। খুশি সব শুনে ওর মা’কে শান্তনা দিয়ে বলে, “মা আপনি আজও পাপাকে চিনলেন না! পাপার কি এখন আর বিয়ের বয়স আছে যে বিয়ে করবে? আমরা এখন বড়ো হয়েছি মা। একটু বুঝতে শিখুন। পাপাকে জানার চেষ্টা করুন। পাপার আত্মত্যাগকে সম্মান দেওয়া উচিত আপনার। পাপার কষ্ট আমি কিছুটা হলেও উপলব্ধি করি। পাপার উপর রাগ করবেন না মা।”

মেয়ের কথা শুনে মিতা শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

খুশি বাবাকে ধমক দিয়ে বলে, আপনাদের আর কত নাটক দেখবো? আপনারা এতবছর সংসার করেও দুজন দুজনের কাউকে চিনতে পারলেন না। মা আপনাকে খুব ভালবাসেন। তাই মা এসব সহ্য করতে পারেন না। আপনি জানেন যে মা অন্য মেয়ের কথা সহ্য করতে পারেন না, তবুও মাকে ওসব কথা বলেন কেন?

রিজু মেয়ের কথায় লজ্জিত হয়ে চুপ করে থাকে।

খুশি থামে না। বলেই চলে। মায়ের তো কোনো দোষ নেই। মা কেন কষ্ট পাবেন বলেন? দোষ যদি কেউ করে থাকেন তাহলে আমার নানা এবং দাদু করেছেন। তার ফল ভোগ আপনি এবং মা কেন করবেন? দাদুর কখনোই উচিত হয়নি আপনার অমতে বিয়ে দেওয়া। বাবার আদর্শ সন্তান হতে গিয়ে নিজেদের এই ভাবে শেষ করে দিচ্ছেন কেন? বাবা মায়ের কথা শুনে বিয়ে করতে গিয়ে যদি আপনাদের এই হাল হয় তাহলে আমি কিন্তু আপনাদের চাপিয়ে দেওয়া ছেলেকে বিয়ে করে জাহান্নামে যেতে পারবো না।

রিজু কোনো উত্তর খুঁজে পায়না।কী বলবে মেয়েকে। ও বড়ো হয়েছে।সব বোঝে ও। একটু হেসে বলে, আমি আমার কোনো সিদ্ধান্ত তোমাকে চাপিয়ে দেবোনা বেটা। বিয়ের জন্য ছেলে মেয়ে উভয়ের পছন্দের গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। তুমি পড়াশোনা করো। প্রতিষ্ঠিত হও। একজন উচ্চ শিক্ষিত রুচিশীল জামাই পেলেই আমি খুশি হব। তোমার খুশিতে আমার খুশি। তুমি সুখী হলেই আমি সুখী। তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে তোমাদের চোখের জল আমি দেখতে পারবো না!

রিজুর কথা শুনে খুশি খুশি হয়। ও বাবাকে কথা দেয় কখনোই সে বাবার বিরুদ্ধে যায় এমন কাজ করবেনা। বাবা যেন মেয়ের প্রতি ভরসা রাখেন। রিজু খুশি হয়। খুশি নিজের ঘরে ঢুকে।

রিজু মিতার পাশে গিয়ে বসে। ডান হাতটা মিতার কাঁধে রাখে। মিতা তার এই কাজের জন্য লজ্জিত হয়ে মুখ নামিয়ে নেয়। খানিকটা বাদে মুখ তুলে নিস্প্রভ দৃষ্টিতে রিজুর দিকে তাকায়। ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, আমি সারাজীবন তোমার সেবা করে এসেও তোমার মনে একটুও জায়গা হলো না আমার! হয়তো আর হবেও না! তোমার শালিনীর সঙ্গে আমি একবার কথা বলতে চাই। আমাকে কথা বলিয়ে দেবে? দেখতে চাই সে কেমন রূপসী। সে এমন কোন গুণের অধিকারী যে পঁচিশটা বছর পরেও তুমি তাকে ভুলতে পারছো না।

……………তুমি শান্ত হও। আমি শালিনীর কথা ভুলতে পারিনা ঠিকই, কিন্তু,কে বলেছে আমার মনে তোমার জায়গা নেই? তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আমার হৃদয় জুড়ে তুমিই রয়েছো। আমি তোমারই।

……….. আর কতো মিথ্যে বলবে! সারাজীবন তুমি আমার সঙ্গে ভালবাসার অভিনয় করে গেলে! এতোগুলো বছর তোমার মিথ্যা কথাগুলো পাগলের মতো বিশ্বাস করে গেলাম। তোমাকে আমি আর বিশ্বাস করিনা। তুমি শালিনীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ করিয়ে দাও। আমি ওর সঙ্গে কথা বলবো। কেন ও আমাদের সংসারে আগুন ধরাচ্ছে আমি জানতে চাইবো।

রিজু আর কথা বাড়ায় না। চুপ থাকে। ভাবে মিতার কথাগুলো তো ঠিকই। কিন্তু কী করবে ও। শালিনীকে ভুলতে চাইলেও যে ভোলা যায় না। ওর নিষ্পাপ মন নিয়ে রিজু যে খেলা খেলেছে তার প্রায়শ্চিত্য না করলে প্রতিনিয়ত রিজুর মন যে অশান্তির আগুনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। সেই পঁচিশ বছর ধরে রিজু এই চাপা আগুনে ধিকিধিকি জ্বলছে। এখন তার লেলিহান শিখা মিতার সাজানো সংসারে প্রবেশ করেছে।

……… আমি তাকে পঁচিশটি বছর দেখিনি। তবে শুনেছি ও আমার সামনে কোনোদিনই আসবে না। আমি জানিনা, শালিনী তোমার সামনে আসবে কিনা! এই সমাজ সংসার থেকে ও পোড়ামুখী নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। তোমার সংসারের সুখের কথা ভেবে নিজের সুখ ত্যাগ করে একাকী জ্বলছে পঁচিশটা বছর ধরে। জানো মিতা, তোমাকে বিয়ে করার জন্য যে মেয়েটির সংসার হয়নি, যার স্বপ্নময় বুকটা এক ঝটকায় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে, সেই মেয়েটি তার এই করুণ পরিণতির জন্য একটি বারের জন্যও আমাকে অভিযুক্ত করেনি। শালিনীর মা নাকি সবসময় বলেন, এটা ওর মেয়ের কপালের লিখন। দুঃখ সওয়ার ক্ষমতা ওর আছে। কিন্তু আমার নাকি নেই। আমি যেন সুখে থাকি। আমি শালিনীর কথা ভেবে যেন কষ্ট না পাই। আমি সুখে থাকলেই নাকি শালিনীর সুখ।

মিতা রিজুর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আর কথা বলে না। রিজুও চুপ করে যায়।

Related Articles

Back to top button
error: