সাহিত্য ও সংস্কৃতি

গল্পের নাম:- “রিজু বাঁচতে চেয়েছিলো” গল্পকার:- মোস্তফা কামাল (পর্ব-২৮)

(পর্ব-২৮)

মিজানুর সাহেবের শরীরটা আজকাল ভালো যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে মাইনর ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল।এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাতদিন আইসিইউ থেকে কিছুদিন হলো ছাড়া পেয়েছেন। ডাক্তার বাবুর পরামর্শ, ঔষধগুলো ঠিক মতো সেবনের পাশাপাশি রুগীর মানসিক সুস্থতা ও বিশ্রামের ভীষণ দরকার।

নেহার বড়ো ছেলে রিজুকে ফোনে ধরেন। বলেন, তোর আব্বা তোদের সবার সঙ্গে একটু বসতে চাইছে। তুই কি আসতে পারবি?

ওপার থেকে রিজু কথা বলে। হ্যাঁ মা, নিশ্চয়ই যাবো। আব্বা এখন কেমন আছেন?

…….হ্যাঁ, আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। খাওয়া দাওয়া ঠিক ঠাক চলছে। ঘরের মধ্যেই একটু আধটু হাঁটাহাঁটি করছে।

…… আচ্ছা মা। কবে আসবো?

…….. তুই যেদিন আসতে পারবি জানাস। তাহলে ঐদিন সব ছেলে মেয়েদের থাকতে বলবো। তোর তো আবার রবিবার ছাড়া ছুটি নেই।

……… না, মা তা নয়। আব্বা চাইলে এক্ষুনি আমি যেতে পারি।

……… না বাবা, এতো তাড়া নেই।তোর আব্বাকে হাসপাতালে দেখাশোনা করার জন্য তোর অনেক স্কুল অনেক কামাই হয়েছে। তুই আগামী রবিবারেই আয়।

…… ঠিক আছে মা। রবিবারেই আসছি। তুমি সবাইকে জানিয়ে দাও।

……. আচ্ছা বাবা রাখছি।

…….ঠিক আছে। তোমরা ভালো থেকো মা।

রবিবার সকালে রিজু ডোমকলে পৌঁছায়। আগে থেকেই রিজুর জন্য সব ভাই বোন অপেক্ষায় ছিলো। মৌরিয়া আসেনি। আলোচনা শুরু হয়।

…… আমি বিশেষ একটা কারণে তোমাদের ডেকেছি। আমার বয়স হয়েছে। একটা বড়ো বিপদ থেকে আল্লাহ আমাকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে নিয়েছেন। জানিনা আর কতদিন বাঁচবো। আমার একটা ইচ্ছার কথাটি তোমাদের জানানো দরকার। আশা করি তোমরা আমার কথা রাখবে।

রিজুর দিকে তাকিয়ে মিজানুর সাহেব বলেন, আমার খুব দুশ্চিন্তা হয় তোমাদের ছোট তিন ভাইয়ের জন্য। ওদের ব্যবসাটা ঠিক মতো চলেনা। সামান্য কিছু আয়ে কোনরকমে সংসারটা চলে। আমার জমি জায়গাও সেরকম তেমন কিছু নেই যে ওরা সেখান থেকে কিছু পাবে। তোমাদের দুই ভাইকে আল্লাহ খুব ভালো রেখেছেন। তুমি চাকরি করছো, মাসুমের ব্যবসাটা আল্লাহর রহমতে ভালো চলছে। তোমরা দুজন নিজেদের মতো করে আলাদা বাড়ি তৈরি করে নিয়েছো কিন্তু আবির, মেহবুব আর মাহির বাড়ি তৈরি করার ক্ষমতা টুকুও নেই। আমার ইচ্ছা, আমি বেঁচে থাকা কালীন ওদের তিন ভাইয়ের নামে এই বসত বাড়িটা রেজেস্ট্রি করে দিই। যদি তোমাদের আপত্তি না থাকে। বিশেষ করে রিজু তুমি বাড়ির বড়ো ছেলে, তোমারও একটা দায়িত্ব রয়েছে ওদের প্রতি। তোমরা দুই ভাই চাইলে আমার ইচ্ছাটা পূরণ হয়। আমি একটু শান্তি পাই। আজকে এজন্যই তোমাদের ভাই বোন সবাইকে ডাকা হয়েছে।

……….জীবিত অবস্থায় অন্যদের বঞ্চিত করে আপনি এই ভাবে কিছু দেওয়া কি ঠিক হবে আব্বা? বললো মাসুম।

……..আব্বা, মাসুম ঠিকই বলেছে।ইসলামের দৃষ্টিতে জীবিতাবস্থায় এই ভাবে দেওয়ার কি কোনো সুযোগ আছে?

………. তোমাদের কি কোনো আপত্তি আছে?

……..আমাদের আপত্তি থাকবে কেন আব্বা। তাছাড়া মেয়েরাও আপনার সন্তান। তাদেরও তো মতামতের দরকার আছে ।

মেয়েদের দিকে তাকিয়ে মিজানুর সাহেব জানতে চাইলেন তাদের মতামত। ওরা একসঙ্গেই উত্তর দিলো বড়ো ভাই যেটা করবেন তাতেই আমাদের মত রয়েছে। ভাইয়ের প্রতি আমাদের ভরসা আছে।

……… রিজু, তুমি বড়ো ছেলে। তুমি আপত্তি না করলে মেয়েরা আপত্তি করবে না।

…… না না, ওদের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা আব্বা। ওদের বিষয়টি ওরাই বলুক। মাথা ঘুরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রিজু বলে, এই হেনা-মনা-শিফা, তোদের কিছু বলার থাকলে বল।

ওরা ওদের আব্বাকে একটু ভয় করে চলে। তিনি ভীষণ সেন্টিমেন্টাল। যা চান তাই করবেনই। অসুখের পর এখন যেন জেদটা আরও বেড়েছে। সাহসে ভর করে কাচুমাচু করতে করতে হেনা বলে, আব্বা আপনি আমাদের অবস্থার কথা তো জানেনই। আপনার জামাই এর কোনো কাজ নেই। সংসারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আমাকে বিয়ের সময় খালি হাতে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছেন। এখন যদি আমাদের বঞ্চিত করেন তাহলে শ্বশুর স্বামীর কাছে মুখ দেখাবো কি করে?

আঙ্গুলের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে নাড়াচাড়া করে মলিনা। কিছু বলতে গিয়ে পারেনা। তবুও আজ ওকে বলতে যে হবেই। হেনা চুপ করতেই মলিনা বলে, আব্বা আপনি একবার আমার কথা ভাবেন, আমি কোন অবস্থায় দিন যাপন করি। বিনা পণে একটা বেকার ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। আপনার জামাই ভেবেছিলো, মেয়ের বাপ যখন মাস্টার তখন পণ চাওয়াটা বোকামি হবে। না চাইলে হয়তো অনেক বেশি পাবে। এখন তার মোহ ভঙ্গ হয়েছে। আমার উপর অত্যাচার বেড়েছে। আমার জীবনে সুখ শান্তি বলে কিছু নেই আব্বা। তিনবেলা চোখের পানি ছাড়া পেটে ভাত ঢোকেনা। আপনার অকর্মা জামাইয়ের অত্যাচার আর কতো সহ্য করবো?

মনাও কিছু বলতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিচ্ছে। মিজানুর সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, আব্বা আমার তো নিজের বাড়ি টুকুও নেই। আমার জন্য কিছু ভাবেন আব্বা।

….. চুপচাপ কথাগুলো শুনছিলেন মিজানুর সাহেব। রিজুর দিকে তাকিয়ে বলেন, তুমি তোমার বোনদের বোঝাও রিজু।

………. আব্বা,ওরা তো ঠিকই বলেছে। ওরাও আপনার সন্তান। ওরাও খুব কষ্টে আছে।

মিজানুর সাহেব চুপ রইলেন। কী যেন মনে মনে ভাবছেন। হঠাৎ ই উত্তেজিত হয়ে বললেন, আমার এই কথাটা মানতে তোমাদের এতো আপত্তি? ছোট ভাইগুলোকে তোমাদের সামান্য একটু অংশ ছেড়ে দিতে পারবে না?

আবির, মেহবুব ও মাহি এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। ওরা তিনজন নিজেদের মধ্যে কী যেন কথা বলাবলি করতে লাগলো। এরই মাঝে আবির বলে উঠলো, বড়ো ভাই যদি মত দেন তাহলে সবাই মত দেবে। ভাই আপনি কিছু বলছেন না কেন?

……. আব্বা জীবিত থাকতে আমি আর কী বলতে পারি বল? এখন সব সম্পদের মালিক তো আব্বাই। আব্বা তার সম্পত্তি যাকে ইচ্ছা তাকে দিতে পারেন। এখানে আমার কিছু বলার নেই। বোনদের ব্যাপারটা তো তোরা বোনেদের মুখ থেকেই শুনলি!

মেহবুব বলে, ভাই আপনি ছেড়ে দিলে বোনেরাও ছেড়ে দেবে।

…… হ্যাঁ ভাই, আপনি রাজি হয়ে যান। অন্ততঃ আমাদের কথা ভেবে…..! আমরা বোনেদের থেকে মাফ চেয়ে নেবো। বললো মাহি।

তিন ভাই তাকিয়ে আছে রিজুর মতামতের দিকে। অপরদিকে মাসুম ও অন্যান্য বোনেরা তাকিয়ে আছে রিজুর সিদ্ধান্তের দিকে। কী করবে রিজু? ও কিছুই ভাবতে পারছেনা।বাপ মায়ের কথা রাখতে গেলে অন্য ভাই বোনদের ক্ষতি হবে। আবার না রাজি হলে বাবার কাছে সে ছোট হয়ে যাবে। তিন ভাই তাকে ভুল বুঝবে। সে তো না হয় ভালো আছে, কিন্তু দুর্বল বোনেদের চোখের জল কি কোনদিন শুকাবে?

রিজু চুপ থাকে। ও জানে, মেয়েদের বঞ্চিত করার জাহেলী রেওয়াজ আজও সমাজে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে আছে। তাকে দূর করা খুব কঠিন। সেই কারণে মেয়েরা পিতার নিকট থেকে সম্পদের কোনো প্রত্যাশা করতে পারে না। প্রত্যাশা করতে ভয় পায়, দোষের মনে করে। ভায়েরা অসন্তুষ্ট হবে, সমাজের লোকে নিন্দা করবে এসবের ভয় করে। ফলে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেনা। বঞ্চিত মেয়েদের থেকে মাফ চাওয়া ও মাফ করা দু’টোই অন্যায়। এর দ্বারা অমুসলিমদের একটি কুপ্রথা এবং শরীয়তবিরোধী ভ্রান্ত প্রচলনকে প্রতিষ্ঠিত রাখা হয়, যা একটি কবীরা গুনাহ। বাবার কথা রাখতে গিয়ে কী করে পারবে রিজু এই জাহেলী প্রথার সপক্ষে কথা বলতে?

………আব্বা, আমাকে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো। আপনার কথাই আমার কাছে আদেশ স্বরূপ। আপনি মাসুম সহ পাঁচ বোনের কথাগুলো একবার ভাবুন। কোনো সিদ্ধান্ত ওদের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। ওরা তো রাজি নাও হতে পারে। তাছাড়া ওদের কথা তো আপনি শুনলেন। মাসুম আর সিফা ছাড়া ওরা কেউ ভালো নেই আব্বা। ওদের বিয়ের সময় আপনি কাউকে কিছু দিতে পারেন নি। এখন এভাবে একেবারে বঞ্চিত না করে আমার একটা মত আছে,যদি আপনি বলতে অনুমতি দেন তো বলি।

……. হ্যাঁ বলো,শুনছি।

……. আমার উপর, আমাদের উপর যদি আপনি বিশ্বাস রাখেন তাহলে এসব আপনাকে ভাবতে হবে না। ভাইদের কোনো কষ্ট হোক বা তারা কষ্ট পাক আমরা কখনই চাইনা। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আর এক্ষুনি যদি করতে চান তাহলে বলবো, আমরা দুই ভাই বাড়ির ভাগ নেবো না । তবে বাড়ির যে অংশ বোনেরা পাবে তাদের বঞ্চিত করবেন না। বাড়িটা ভ্যালুয়েশন করুন। এই বাড়ি থেকে প্রাপ্য অংশের সমান অর্থের মাঠের জমি তিন ভায়ের অংশ থেকে পাঁচ বোনকে নির্দিষ্ট করে দিন। না হলে ওরা কষ্ট পাবে। ওরা খুব গরীব আব্বা। ওরা স্বেচ্ছায় যদি কেউ কোনো ভাইকে ছেড়ে দেয় তাহলে তাদের নিজেদের ব্যাপার। এক্ষেত্রে আপনি তাদের অনুরোধ করতে পারেন না। ভায়েরাও পারেনা। আপনার পরকালটাও দেখতে হবে আব্বা।

…… তাহলে কী তোমরা চাওনা তোমাদের ছোট তিন ভাই ভালো থাকুক?

……আব্বা আপনি এ কী বলছেন?

……হ্যাঁ রিজু, ঠিকই বলেছে তোদের আব্বা। সেই দুপুর থেকে তোদের বোঝানো হচ্ছে, তোরা কিছুতেই বুঝতে চাচ্ছিস না। বলতে পারছিস না, আব্বা আপনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমরা মেনে নেব।

…………মা তুমিও একথা বলছো? মেয়েরাও তো তোমার সন্তান মা। তাদের বঞ্চিত করে কি আব্বা সঠিক কাজ করবেন? তোমরা তো জানো মা, ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা প্রত্যেক পিতা মাতার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই সমতা রক্ষা না করলে ছেলে মেয়েদের মনে খারাপ প্রভাব পড়ে। পিতা মাতাকে বঞ্চিতরা ভালো চোখে দেখে না। সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব তৈরী হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা একধরনের অপরাধ মা।

নেহার চুপ করে যান। রিজুর কথার জবাব খুঁজে পাননা।

মিজানুর সাহেব অস্থির হয়ে উঠেছেন। তার সমস্ত শরীর ঘামতে শুরু করেছে। নেহার পাখার বাতাস করতে লাগলেন। আবির, মেহবুব, মাহির চোখে রিজু খারাপ হয়। মেয়েরা বলে,ভাই তো ঠিকই বলেছেন। আমাদের কথা আব্বা একবারও ভাববেন না?

উত্তেজিত হয়ে মিজানুর সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। “ঠিক আছে, তোমরা সবাই হাদীস কোরআন বুঝে গেছো। আমি কিছুই বুঝিনা। আমার কথা যখন শুনবে না তখন আমি তোমাদের এই মুখ দেখাতে চাই না। আমি তোমাদের হতভাগা পিতা। আমি মরতে চাই। আল্লাহ তুমি কেন আমাকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে আনলে? অবাধ্য ছেলে মেয়েদের মুখ দেখার থেকে ওখানেই আমার মরণ ভালো ছিল! এমন অবাধ্য ছেলে মেয়েদের মুখ আমি দেখতে চাই না।”

হঠাৎ ই তিনি চিৎকার করতে করতে টয়লেটের দিকে ছুটে গেলেন।সবাই দৌড়ে গিয়ে মিজানুর সাহেবকে ধরলো। টানাটানি করে এনে বিছানায় শুইয়ে দিল। তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। হেনা ছুটে গিয়ে ইনহেলার এনে দেয়। মিজানুর সাহেব হাঁফাতে হাঁফাতে ডান হাত দিয়ে ইনহেলারটি ধরে মুখের মধ্যে নিয়ে দুবার পাম্প করে নেন। একটু স্বস্থি পান। আরাম লাগে। নেহার কাঁদতে কাঁদতে পাখার বাতাস করেন। মেয়েরা কাঁদে। আকস্মাৎ এই ঘটনায় রিজু হতভম্ব হয়ে যায়। ফ্যালফ্যাল করে দাঁড়িয়ে দেখে।

বাবার এই পরিণতি দেখে আবির রিজুকে দোষারোপ করে। বলে, আপনার জন্যই আমার আব্বার এই অবস্থা হলো। আপনি কী করতে আসেন আমাদের বাড়িতে? আপনি কোন কাজে লাগেন আমাদের? মা বাপের কোন কাজটি করেছেন? একটু অংশ ছাড়তে পারেন না আর মুখে শুধু বড়ো বড়ো কথা বলেন।আজ আব্বার যদি কিছু হয় তার জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।

মেহবুব ও মাহি একটা বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রিজুর দিকে। রিজুর মনে হয় বাবার এই আচরণে সে কতটা ছোট হয়ে গেল ভাইদের কাছে। কিন্তু রিজু তো কোনো অন্যায় বলেনি। তবে কেন বাবা এমনটি করলেন? তার আচরণের জন্য ভায়েরা তাকে ভুল বুঝছে। বরাবরই রিজুকে এভাবেই ভুল বুঝে এসেছে ওরা।

সন্তানদের প্রতি আদর- স্নেহ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সব বাবা মায়ের একটা সমতা রক্ষা করা দরকার। তাদের উচিত জীবিতাবস্থায় সন্তানদেরকে জমি জমা, টাকা-পয়সা দিলে সব সন্তানকেই ছেলে হোক বা মেয়ে সমান হারে দিবেন। মেয়েদের ততটুকুই দেবেন যতটুকু ছেলেদের দেবেন। তারা যদি সন্তানদের সঙ্গে বিষম আচরণ করে থাকেন তাহলে সেটা অন্যায় হবে। উপযুক্ত সন্তানেরও উচিত, এই ধরনের ভুল পদক্ষেপ থেকে বাবা মাকে বাঁচিয়ে নেওয়া। রিজু পারবেনা তার বাবা মাকে অন্যায়ের মুখোমুখি করাতে।

মায়ের দিকে তাকিয়ে রিজু বললো,মা তোমাদের সামনে ওরা আমাকে এতো বাজে কথা শোনালো আর তুমি চুপ থাকলে? আমি কি কিছুই করিনা তোমাদের জন্য? আব্বার নির্দেশের বাইরে আমি কোন কাজটা করেছি বলতে পারো? আব্বার কি কোনো কাজে আমি লাগিনা মা?

নেহার চুপ থাকেন। আবির বলে ওঠে, আমাদের আব্বা মাকে আমরাই দেখতে পারবো। আপনাকে আর দেখতে হবে না। আপনার দরকার নেই। আপনি আমাদের কেউ না। আপনি চলে যান। আপনি থাকলে আব্বার অসুখ বেড়ে যাবে।

……..মা তুমি কি আবিরকে সমর্থন করছো? তাহলে সত্যিই কি আমার কোনো দরকার নেই? তোমাদের সামনে আবির এতবড়ো কথা বলতে পারলো মা? ও বলতে পারলো আমি এই বাড়ির কেউ না?

নেহার কোনো কথা বলেনা।

চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে মাসুম আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। যেতে যেতে বলে গেছে, দেখলেন ভাই, এজন্য আমি এই বাড়িতে আসতে চাইনা। আপনি আসবেন বলেই এসেছিলাম। আর আসবো না। রিজুও কিছু বলতে পারেনি ওকে। সে স্তম্ভিত হয়ে স্তম্ভের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।

নেহার বিড়বিড় করে কী যেন সব বলে। রিজু আর কথা বাড়ায় না। ডাক্তার বাবু বারবার রিজুকে বলে দিয়েছিলেন, রুগীকে টেনশন ফ্রি রাখবেন। কোনো কারণে উনি যেন উত্তেজিত না হোন সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এবার কিছু হলে রুগীকে বাঁচানো যাবেনা।

ডাক্তারের কথাগুলো রিজুর কানে বারবার ধাক্কা মারে। বাবা মৃত্যুর দুয়ার থেকে সদ্য ফিরেছেন। টেনশন করতে মানা তার। কোনো অবস্থায়ই সংসারের এই বটবৃক্ষকে বিপদের মুখোমুখি করবেনা রিজু। সবাই ভুল বুঝুক রিজুকে। হোক তার কষ্ট। এই মুহূর্তে তাকে সব হজম করতে হবে।

এদিকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আকাশটা মুখ ভার করে আছে। হয়তো এক্ষুনি বৃষ্টি হবে। রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে রিজু বাড়ি থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে আসে। যেমন ভাবে মিজানুর সাহেব তার বাবা ইসার বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

Related Articles

Back to top button
error: